১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০২

এক শিক্ষিকার এমপিও নিয়ে তুলকালাম, অডিও ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

এক শিক্ষিকার এমপিও নিয়ে তুলকালাম, অডিও ফাঁস

প্রতীকী ছবি

এক শিক্ষিকার এমপিও নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে রাজশাহীজুড়ে। গত সেপ্টেম্বরে নাটোরের গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি পর্যায়ের ওই শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তার নাম কামরুন্নাহার। গত জুনে এমপিও আবেদন করলেও নিবন্ধন সনদ জটিলতায় ওই সময় আবেদন বাতিল করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের আঞ্চলিক পরিচালক।

মাউশির নির্দেশনা মেনে পরের দফা ফের আবেদন করেন তিনি। এরপর এমপিও পেতে শুরু হয় জোর তদবির। ওই সময় কামরুন্নাহারের মামা মকবুল হোসেন আঞ্চলিক শিক্ষা দপ্তরের উপপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান শাহর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। কথোপকথনের সেই রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এরপরই তুলকালাম শুরু হয়েছে এই অঞ্চলের শিক্ষক মহলে।

প্রকাশ হওয়া ওই কল রেকর্ডে উপ-পরিচালককে বলতে শোনা যায়-"আমি তো ওই ফাইল ছেড়ে দিবো। কিন্তু আপনি তো পরিচালক-সহকারী পরিচালক সম্পর্কে জানেন সবই। তারা এমনি এমনি কাজ করতে চান না। এইটা মূল সমস্যা। এ জন্য আপনাকে সেক্রিফাইস করতে হবে। ওটা করলেই কাজটা হয়ে যাবে।"

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক কামরুন্নাহারের মামা মকবুল হোসেন পেশায় কলেজ শিক্ষক। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তিনি। কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি দাবি করেন, এই কথোপকথন তার রেকর্ড করা নয়। এটি তিনি ছড়াননি।

তবে তিনি স্বীকার করেন, কামরুন্নাহার তার ভাগ্নি। তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। কলেজের পাশেই তার শ্বশুরবাড়ি। ভাগনির এমপিওর বিষয়টি তিনিই দেখভাল করতেন।

মকবুল হোসেন বলেন, গত জুন মাসে তার ভাগ্নি এমপিওভুক্তির আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল। অনলাইনে তিনি দেখতে পান সেটি উপ-পরিচালক মাহাবুবুর রহমান শাহ'র কাছে আছে। পরে তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। ফাইল ছেড়ে দিতে তিনি অর্থ দাবি করেননি বলে জানান।

যে শিক্ষককের এমপিও নিয়ে এই তুলকালাম সেই শিক্ষক কামরুন্নাহার জানান, কলেজ শিক্ষক মকবুল হোসেন তার মায়ের ‘কাজিন’। সেই হিসেবে তাকে এমপিওর বিষয়টি দেখভাল করতে বলা হয়েছিল। তার এমপিও পেতে কোনো অর্থ খরচ করতে হয়নি।

তিনি দাবি করেন, তার এনটিআরসিএ নিবন্ধন ২০০৬ সালে। এমপিও আবেদনের পর আঞ্চলিক শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছিল তারা সনদ অনলাইনে পাচ্ছে না। কারণ ওই সময় এনটিআরসিএর অনলাইন ডাটাবেজে এই তথ্য ছিল না। পরে বিষয়টি রিভিউ করে নিস্পত্তি হয়েছে। এই সমস্যা শুধু তার একার নয়, আরও অনেকেরই ছিল।

কামরুন্নাহারের এমপিও আবেদন যে সময় হয়েছিল সেই সময় গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন আকরাম হোসেন।  ওই বছরের ১৯ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ ছিলেন নূরুন্নবী। এখন তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। 

নূরুন্নবী বলেন, কামরুন্নাহারসহ তারা ডিগ্রি পর্যায়ের সাতজন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কামরুন্নাহারসহ দুজনের এমপিও আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়। কারণ দেখানো হয়, তাদের এনটিআরসিএর নিবন্ধন সনদ সঠিক নয়। এটি যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় অধ্যক্ষকেই। সেই হিসাবে তিনি নিজেই এনটিআরসিএ থেকে দুইজনের সনদ যাচাই করে আনেন। পরে একসঙ্গে তাদের এমপিও আবেদন হয়। ওই সময় একজনের আবেদন নিস্পত্তি হলেও ঝুলে ছিলো কামরুন্নাহারের আবেদন। সর্বশেষ এমপিওতে সেই আবেদনও নিষ্পত্তি হয়েছে।

এমপিও ভুক্তিতে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করেন, বিধি মেনে তারা অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। এরপর শিক্ষকরা নিজেদের মতো যোগাযোগ করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তার কাছে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

অভিযোগ বিষয়ে উপ-পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান শাহ বলেন, পরিচালক ও সহকারী পরিচালককে ফোনে না পেয়ে তাকে প্রতিদিনই অসংখ্য শিক্ষক ফোন দেন। তিনি নিজের জায়গা থেকে শিক্ষকদের হাসিমুখে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, এমপিও আবেদন নিস্পত্তি করার ক্ষমতা তার নেই। ফলে এমপিও পাইয়ে দিতে অর্থ দাবির বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন। 

আর ফাইল আটকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এমপিও শেষে সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক এবং পরিচালকের কাছে কিছু ফাইল আটকে থাকে। সময় সল্পতার কারণে এটি হয়। পর্যায়ক্রমে এসব আবেদন নিস্পত্তি করেন তারা। ওই শিক্ষকের আবেদনও এর মধ্যে থাকতে পারে।

উপ-পরিচালক অভিযোগ করেন, সম্প্রতি দুই দফা পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন এবং সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত হয়েছে। তারা শাস্তির মুখে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর