হাড় কাঁপানো শীতে কুয়াশা ভেজা পৌষের সকাল। শিশির সিক্ত রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেসের মাঠ। একদল তরুণের উন্মাদনা আর উল্লাস মুহূর্তের মধ্যেই উষ্ণতা ছড়িয়ে দিলো সেই মাঠে। সূর্যটা যখন মাথার উপরে, ঠিক তখনই নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার ‘স্বাধীনিতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্য পুকুরে গ্রামের মেয়ের অবাধ সাঁতার’ পংক্তিটির চিত্রায়ন হয়েছিলো।
মধ্য পুকুরে না হলেও বিজিপ্রেসের মাঠজুড়েই ছিলো এস এস সি ২০০৭ ও এইচ এস সি ২০০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উন্মাদনা। সেই উন্মাদনা আর উল্লাসে ফুটে উঠেছিলো আত্মার নিবিড় বন্ধনের সেতুবন্ধন। ৯০ দশকে ধরনীতে এসে ভুবন আলোকিত করা তরুণ তরুণীরা মেতে উঠেছিলো বাঁধনহারা তারুণ্যের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে। ২০০৭-২০০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একাকার হয়ে মিশে গিয়ে স্মৃতির সমুদ্রে হাতড়ে বেড়িয়েছিলো ফেলে আসা দিনগুলো।
কৈশোরের সাথে তারুণ্যের মেলবন্ধনের হিসাবের সরল সমীকরণে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির কথা স্মৃতির আলমারিতে তুলে রেখে ভালোলাগা, ভালোবাসা আর নিখাদ আনন্দে মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়িয়েছিলো। উল্লাস, উচ্ছ্বাসের সাথে খাওয়া দাওয়া আর সুরের বৃষ্টিতেও নিজেদের ভিজিয়েছিলো একই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার বিস্তৃত প্রান্তর থেকে ছুটে আসা একই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পদচারণা, কোলাহল আর মিলনমেলায় যেন লাল-সবুজের পতাকার গোটা মানচিত্রই উঠে এসেছে এই আনন্দযজ্ঞে। ভালোলাগার এমন শৈল্পিক দৃশ্যকল্প ছিলো এসএসসি ২০০৭ ও এইচএসসি ২০০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়।
শুক্রবার ছুটির দিনে তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেস মাঠে অনুষ্ঠিত হয় 'গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন ০৭০৯' শিরোনামের আনন্দঘন এই বর্ণাঢ্য আসর।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই শুভ আয়োজন। এরপর জাতীয় সঙ্গীত শেষে কুশল বিনিময়, করমর্দন আর কোলাকুলিতে রাজ্যের ভালোবাসা তৈরি হয় অনুষ্ঠানজুড়ে। নাস্তার টেবিল থেকে মধ্যাহ্নভোজেও ছিলো কুশল বিনিময় আর খুনসুঁটির পালা। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে প্রমাণিত হলো আত্মার আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনো কখনো রক্তের সম্পর্কের বন্ধনকেও হার মানায়।
সকালের পর্ব শেষে বিকালের পর্বেও সেই চিত্র ফুটে উঠেছিলো কুষ্টিয়ার এক অসুস্থ বন্ধুর চিকিৎসার্থে আরেক বন্ধুর এক লক্ষ টাকা প্রদানের মাধ্যমে। পড়ন্ত বিকালের সুরের বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের সুরের চাঁদরে আবৃত করে সাঁঝের বেলার হিমশীতল পরিবেশকে উষ্ণ করে তুলেছিলো তারুণ্যে উদ্ভাসিত শিক্ষার্থীরা।
জমকালো এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গ্রুপ ক্রিয়েটর নাদিরা নিপা। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় ২০০৭-২০০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র।
জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এমন একটি আনন্দঘন পরিবেশে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ২০০৭-২০০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উল্লাস, উচ্ছাস ও উন্মাদনা দেখে আমার শৈশবে হারিয়ে গেলাম বলেই মনে হচ্ছে। স্কুলজীবনের স্মৃতিগুলো খুবই মনে পড়ছে। বন্ধুত্ব এমন একটা শব্দ যার মূল্যায়নের কোন সীমারেখা নেই। তারুণ্যের নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেখে আমি আবেগাপ্লুত। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন ভূখন্ড ও লাল সবুজের পতাকা পেতাম না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বলেই আজ তোমরা আনন্দ উদযাপন করতে পারছো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাস ধারণ করে আজকের তরুণরা এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা করছি। তোমাদের গ্রুপের প্রত্যেককেই স্বাগত জানাই। তোমাদের উদযাপন আমাকে বিমোহিত করেছে। তোমাদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামীর নেতৃত্ব। তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ।
এসময় জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতিকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব আরাফাত মুন্না। অনুষ্ঠানে গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেলকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়। সবশেষে ছিলো আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র।
রবিঠাকুরের ভাষায় 'যেতে নাহি দিবো হায়, তবু যেতে দিতে হয়', তবু যেতে হয়'। কবিতার পংক্তির সেই দৃশ্যটিই ফুটে উঠেছিলো বিদায় বেলায়। যার কারণে আনন্দের এই আসরে বিষাদের ছাপ নেমে আসে বিদায়বেলায়। সীমাহীন আনন্দের ঢেউ শেষে এক পাহাড় দুঃখ নিয়ে বিদায় বেলায় একে অপরকে বলেছিলো ' আবার দেখা হবে- ভালো থাকিস বন্ধু'।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল