২৪ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৫৯

‘স্বীকৃতি না পাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে একটি চক্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

‘স্বীকৃতি না পাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে একটি চক্র’

স্বাধীনতাকামী বাঙালি নিধনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামে যে গণহত্যার সূচনা হয়েছিল, তা চলে ১৬-ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত। মাঝের এই নয় মাসে পাক বাহিনীর গণহত্যার শিকার হন ৩০ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই বিশ শতকের সবচেয়ে বড় গণহত্যা। লাখো তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও ৫২ বছরে মেলেনি এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ফলে অনেকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে।

একাত্তরের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে রাজশাহীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সিনেট ভবনে এই সভার আয়োজন করে ওয়ান বাংলাদেশ। সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ রাজশাহীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরেই আমরা আবারও পাকিস্তানের উত্তসূরিদের পেয়েছি। ৭১ এর যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হন। যাদের মধ্যে আছে ১ হাজার ১১১ জন বৃদ্ধিজীবী, ৭ হাজার যুদ্ধশিশু। উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৪টি গণকবর। ১৯৭১ এর যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের দেওয়া বিভিন্ন তথ্য সূত্রেই বলা হয়ছে তারা ৩০ লক্ষাধিক বাঙালিকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে।

এসময় তিনি জাতিসংঘের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে এখনও গণহত্যার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি মেলেনি। এমনকি দেশেও জাতীয় স্বীকৃতি পেতে দেরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশে একটি বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মূলে রয়েছে জামায়াত-শিবির। যাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বিএনপি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগানো সুযোগ করে দিয়েছিল, দিয়েছিল বাংলাদেশের সংসদে বসার সুযোগ। দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভাজন দূর করা গেলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জাতি গঠন করা যাবে। একারণে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি রাজাকার, আলবদল ও আলশামসের তালিকা হওয়াও জরুরি।

শহীদ বুদ্ধিজবী ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও শহীদদের সন্তানদের দেশের মধ্যেই যুক্তি তুলে ধরতে হয় ‘একটি গণহত্যা হয়েছিল’। একটি স্বীকৃতির জন্য ঘুরতে হয়। শুধু বিশ্বের দ্বারেই নয় জনগণের দ্বারে দ্বারেও। স্বাধীনতার বহু বছর পর দেশেই জাতীয় গণহত্যা দিবস পেয়েছি ২০১৭ সালে। তাও এখনও আইনে স্পষ্ট অনেক কিছুই নাই। পাকিস্তানিরা প্রথম আঘাত করেছে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর। তারা আমাদের আত্মপরিচয়ের ওপর আঘাত হেনেছে। এখন সেই বিষয় নিয়ে কু-তর্কে জড়াতে হয়। আসেলে ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ, কতো জনকে হত্যা করা হয়েছিল, এমন বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আর কোথাও যেন গণহত্যা না হয় সেজন্য অতীতের গণত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। আর আমরা যারা শহীদ পরিবারের সদস্যরা আছি শুধু ওই দিনটি দেখবো বলেই বেঁচে আছি।  

আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলছে না উল্লেখ করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শাহ আজম বলেন, বাংলাদেশে গণত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া গেলে যারা এই গণহত্যা চালিয়েছিল তারা বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে না। ২৫ মার্চ সহ ১৯৭১ সাল জুড়ে বাঙালি জাতির ওপর যা হয়েছিল তা ইতিহাসের পাতায় অভিশপ্ত একটি অধ্যায়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করা সম্ভব হয়নি। এর পিছনে আছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। আসলে গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না বিশ্ব মোড়লারাই।

পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বাঙলিকে গণহত্যা বিষয়ে সন্ধিহান করা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক এবং যারা এটা করেছে তারা এ দেশের স্বাধীনতার শত্রু। নতুন প্রজন্মকে এবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস সবাইকে জানতে হবে।

ওয়ান বাংলাদেশের আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. রশীদুল হাসান।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর