মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার তিনদিন পর নিরবতা ভেঙে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। তবে সরাসরি নয়, ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উদ্দিপ্ত করার চেষ্টা করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এক লাইভে বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাসভবন চত্বরে সমবেত মহানগর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক।
এ সময় বরিশালপ্রান্তে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, ২ প্যানেল মেয়র গাজী নাইমুল হোসেন লিটু ও রফিকুল ইসলাম খোকন, দলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের বক্তব্যে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কোন সন্দেহ আছে কারো, জোরে শুনতে চাই কারো সন্দেহ আছে? এর উত্তরে নেতাকর্মীরা ‘না’ সূচক জবাব দেন।
সাদিক বলেন, বিষয় হইছে-জননেত্রী নমিনেশন দেছে আমার চাচারে। আমরা এমন কোন কাজ করবো না যাতে মাঝখান দিয়ে অন্য লোকজন এর ফায়দা নিতে পারে। যারা উপস্থিত তাদের সবার উদ্দেশে বলতেছি, যারা মাঠে লাফালাফি করতেছে-তারা করবেই স্বাভাবিক। আমি অপেক্ষা করতেছি বাবা (আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি) মিটিং ডাকবে জেলা ও মহানগরের বর্ধিত সভা হবে তখন বাবার সাথে বরিশাল আসবো। আজকে আপনাদের সবার সাথে কথা বললাম এই কারণে যাতে সবাই ক্লিয়ার থাকেন। কোন দ্বিধাদ্বন্ধ নাই। জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। থ্যাংক ইউ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। এবার সুযোগ পাইছি বাবার সাথে ঈদ করার। প্রতি বছর আপনাদের সাথে করছি। এবার বাবার সাথে ঈদ করবো। ইনশাআল্লাহ কেউ মনঃক্ষুন্ন হওয়ার কারণ নেই। রাজনীতি একদিনের না। নমিনেশন পাইছে আমার চাচা। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সন্তান। মাঝখান থেকে কিন্তু কাউকে সুযোগ দেয়া যাবে না। শান্ত বরিশালকে শান্ত রাখতে হবে। কোনভাবে অশান্ত করার সুযোগ নাই।
আপনারা ৩০টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদক এই মেসেজটা (বার্তা) জনগণের কাছে পৌঁছাইয়া দেবেন। মহানগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ ছাত্রলীগের ভাইয়েরা উপস্থিত আছেন- সবাই একতাবদ্ধ থাকেন। সামনে নির্বাচন। আমাদের জয়লাভ করতে হবে। এইটার উপর নির্ভর করে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। নৌকা মার্কাকে জয়লাভ করাতে হবে ‘নো ম্যাটার হোয়াট’। কথা হইছে যাইয়া-হে (আওয়ামী লীগ মনোনয়ন পাওয়া খোকন সেরনিয়াবাত) আমার চাচা। অন্য কোন বিষয় নাই। চাচা করবে নির্বাচন। আমরা তার নির্বাচন উঠাইয়া দেব। যেখানে যা করা লাগে আমরা করব। কেউ মনঃক্ষুন্ন হবেন না। আমি সংগঠন করতে আসছি এখানে। অনেক দূর যাওয়ার...। কি বলছি বোঝছেন? আমি মনঃক্ষুন্ন না। নেত্রীর সিদ্ধান্ত। রাজনীতি করি নেত্রীর জন্য। নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে-আমার বাবা মাতা পেতে নিয়েছে, আমিও নিয়েছি। এর বাইরে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই।
তখন ঢাকা প্রান্ত থেকে মেয়র সাদিক মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জাহাঙ্গীর কাকু কিছু বলবেন। তখন একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, সম্পাদকের কাছ থেকে এই সিদ্ধান্ত শোনার অপেক্ষায় ছিল বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ।
এ সময় মেয়র বলেন, আমরা একতাবদ্ধ ছিলাম, আগামীতেও একতাবদ্ধ থাকব। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গতকালের কথা শুনে যার মনে যা দুঃখ ছিল দূর হয়ে গেছে। এ জন্য এত গরমেও আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সবাই উপস্থিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করবো।
এ পর্যায়ে নিজের এবং পরিবারের সবার পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ফেসবুক লাইভ শেষ করেন মেয়র সাদিক।
এর আগে গত শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বর্তমান মেয়র সাদিককে বাদ দিয়ে বিসিসি’র আসন্ন নির্বাচনে তার চাচা আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতকে দলীয় মনোনয়ন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান মেয়র সাদিক। তিন দিনের নিরবতা ভেঙে চতুর্থ দিনে ফেসবুক লাইভ করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত