গাজীপুরে হাত-পা বেঁধে বাড়ির মালিককে খুনের ঘটনার ভাড়াটিয়া দম্পতিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কাশিমপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে দুইজন বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার শ্যামলীপাড়া এলাকার মৃত শাহীন শাহর ছেলে জাকির হোসেন (৩৮), জাকিরের স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের বিজেশ্বর এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর মেয়ে হাবিবা চৌধুরী (২৭) ও চট্টগ্রামের সন্দীপ থানাধীন কালাপানিয়া এলাকার সেলিম ভুইয়ার ছেলে আরিফ ভুইয়া (৩৬)। তারা সবাই গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কোনাবাড়ি জোনের সহকারী কমিশনার দিদারুল ইসলাম জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন তেঁতুই বাড়ি এলাকায় বাবার বাড়িতে থেকে বাড়ির দেখাশোনা করতেন আব্দুল মান্নানের মেয়ে মনোয়ারা বেগম ওরফে রেখা (৪০)। সেই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন জাকির-হাবিবা দম্পতি। এ দম্পতির কাছে দাদন দেওয়া এক লাখ টাকার সুদসহ ২ মাসের বকেয়া বাড়ি ভাড়া বাবদ মোট ৩০ হাজার টাকা পাওনা ছিল রেখার।
গত ১৫ এপ্রিল ওই পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। নিখোঁজের প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর পরদিন সন্ধ্যায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রেখার বস্তাবন্দী আংশিক গলিত লাশ জাকির-হাবিবা দম্পতির তালাবদ্ধ ঘরের খাটের নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জাকির-হাবিবা দম্পতিকে সিরাজগঞ্জ ও আরিফকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে প্রেরণ করা হলে জাকির ও আরিফ আদালতে খুনের ঘটনা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, প্রায় তিন মাস আগে এ বাড়ির ভাড়াটিয়া আরিফ বাসা ছেড়ে যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত ২ মাসের ভাড়া আদায় করে রেখা। এতে ক্ষুব্ধ হয় আরিফ। এ ঘটনার পর গত ১৪ এপ্রিল পাওনা টাকা নিয়ে জাকিরকে গালমন্দ করেন রেখা। সন্ধ্যায় আরিফের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানায় জাকির। এসময় তারা রেখার উপর প্রতিশোধ নিতে তাকে উলঙ্গ করে ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন সকালে রেখাকে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য খবর দেয় জাকির। এদিকে আগে থেকেই জাকিরের বাসায় গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে আরিফ।
সকাল ১০টার দিকে রেখা জাকিরের বাসায় গেলে তাকে জোর করে বাথরুমে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে তারা। এসময় রেখা চিৎকারের চেষ্টা করলে তার মুখ চেপে ধরে আরিফ এবং জাকির গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করার জন্য দু’টি বস্তায় ভরে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে আরিফ পালিয়ে যায়। এদিকে বিকেলে হাবিবা কর্মস্থল থেকে ঘরে এসে ঘটনাটি জেনে গোপন রাখেন এবং ঘরে তারা রাত্রিযাপন করেন। পরদিন লাশে পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে হাবিবা তার স্বামীকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ পালিয়ে যান।
বিডি প্রতিদিন/এমআই