বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন জমার শেষ দিনে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম এবং বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপনসহ ৬ জন মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আজ ৬ জনসহ এবার মেয়র পদে ১০ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করে সবাই জমা দিয়েছেন। সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়ণ জমা দিয়েছেন ১৮৮ জন। শেষ দিনে মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপন সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

এদিকে নগরময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর গণসংযোগ ও প্রচারণা চলছে ৩ স্তরে। প্রার্থী নিজে, তার সহধর্মীনি লুনা আবদুল্লাহ এবং সংগঠন সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী কার্যক্রম। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাবেক জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সুশীল মানুষের বাসায় বাসায় যাচ্ছেন জাপা প্রার্থী তাপস। তিনিও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত।   

মনোনয়ন জমা দেয়ার পর ফয়জুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই। একজন প্রার্থীর ছবি ও মার্কাসহ লিফলেট দেয়া হচ্ছে। অন্যদের বিরুদ্ধে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে কমিশন। এতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
 
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় মনোনয়ন জমা দেন বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন। পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, নগরীতে দুই দিন ধরে হামলা-মারামারি হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের মোটরসাইকেল মহড়ায় মানুষ আতংকিত। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন রূপনও। 

এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী প্রচারণা চলছে ৩ স্তরে। প্রতিদিনই সভা-গণসংযোগসহ সামাজিক কর্মকান্ডে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।  

নৌকা প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, আমরা এখন ৩ স্তরে গণসংযোগ করছি। প্রার্থী নিজে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থী। তার সহধর্মীনি লুনা আবদুল্লাহ প্রতিদিন অন্তত ২টি গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে আমি নিজে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাচ্ছি। 

জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কবে নামবে বা নামবে কিনা জানতে চাইলে আফজাল বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে, এর আগের বার জেলা পরিষদের দলীয় মনোনয়ন ঘোষনার এক সপ্তাহের মধ্যে এবং সব শেষ বর্তমান মেয়র দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বর্ধিত সভা করে দলীয়ভাবে প্রার্থীর পক্ষে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নেমে কাজ করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন ঘোষণার একমাস হয়ে গেলেও প্রার্থীর পক্ষে জোড়ালো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। যারা বর্ধিত সভার ধুয়ো তুলেছে তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবে। 

আফজাল আরও বলেন, গত ৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী বরিশালে অর্থ বরাদ্দ দেননি যোগ্য লোকের অভাবে। যোগ্য লোক হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতকে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার হাত ধরে নতুন বরিশাল বিনির্মাণ হবে। বরিশালের উন্নয়নের অভাব ঘোচাতে মানুষ নৌকা বেঁছে নেবে বলে প্রত্যাশা আফজালের। 

অপরদিকে প্রচারণায় বিধি নিষেধ থাকায় মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বাসায় যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। তার সহধর্মীনি ইসমত আরা ইকবালও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাপা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন।

ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর একচ্ছত্র আধিপত্য। যিনি কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা করেন না। গতকালও তিনি অফিস উদ্বোধন করেছেন। একেরপর অফিস উদ্বোধন করে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন সেগুলো দেখেনা। তাপস বলেন, উনি এবং ওনার নেতাকর্মীদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে মনে হয় উনি অলরেডি মেয়র। সময়ের অপেক্ষা। এগুলো বুঝেই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এগিয়ে যাচ্ছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিসিসিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও জাকের পার্টি দলীয়ভাবে এবং ৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারন কাউন্সিলর পদে ১৪৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪২ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আগামী ১৮ মে বাছাই, ২৫ মে পর্যন্ত প্রত্যাহার এবং ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। 

বিডি প্রতিদিন/এএ