বরিশালে একটি মাদক নিরাময় ও চিকিৎসা কেন্দ্রে এক সন্তানের জননী এক নারী রোগী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার ভোর রাতের দিকে নগরীর ১ নম্বর সিএন্ডবি পোল সংলগ্ন দি নিউ লাইফ মাদকাসক্তি ও মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা হলেও মৃত আফরোজা বেগমের মেজ বোন নিলুফা বেগম বলেন, বোন তো আর ফেরত পাব না। এ নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমাদের বিরক্ত করবেন না।
মৃতের পারিবারিক ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট গ্রামের বাসিন্দা আফরোজা বেগমের স্বামী আজাদ সিকদার একজন প্রবাসী। আরিফ হাসান নামে তাদের ৭ বছর বয়সের একটি সন্তান রয়েছে। প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতিতে আফরোজা পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এ নিয়ে প্রবাসী স্বামীর সাথে তার মনোমালিন্য হয়। পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়ায় আফরোজাকে তার পরিবারের সদস্যরাও বকাঝকা করে। এতে আফরোজা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে।
আফরোজার মেজ বোন নিলুফা বেগম জানান, আফরোজা দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তাকে ঢাকায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে সে এমএ পাস করে এবং এক প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দাম্পত্যে একটি সন্তান রয়েছে। সম্প্রতি সে এক ছেলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। সে বাসায় অস্বাভাবিক আচরণ করে। মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর বরিশালের নিউ লাইফ মাদকাসক্তি ও মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করান তারা।
৩ সেপ্টেম্বর সকালে নিরাময় কেন্দ্রে থেকে ফোনে তাদের জানানো হয় আফরোজা বাথরুমের ভেন্টিলেশন গ্রিলের সঙ্গে ওড়না বেধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে কেন্দ্রে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখেন শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ৩৯ মিনিটের দিকে বিছানা থেকে উঠে একটা ওড়না নিয়ে বাথরুমে যায় আফরোজা। ঘণ্টাখানেক পর ওই রুমে দায়িত্বরত কেয়া বেগম হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে বাথরুমে ভেন্টিলেশনের গ্রিলে ওড়না বাঁধা অবস্থায় গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলতে দেখেন।
আফরোজার স্বজন মন্টু মিয়া জানান, অসংলগ্ন আচরণের কারণে আফরোজাকে সার্বক্ষণিক দেখভাল ও চিকিৎসার জন্য বরিশালের নিউ লাইফ মাদকাসক্তি ও মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করেন তারা। কেন্দ্রের কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাথরুমে গিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আফরোজার মেজ বোন নিলুফা বেগম মুঠোফোনে বলেন, আমরা ৩ বোন, ভাই নেই। আফরোজা সবার ছোট ছিল। মানসিক কারণে সে আত্মহত্যা করেছে। বোন চলে গেছে। তাকে আর ফেরত পাবো না। এ নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। দয়া করে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করে আমাদের আর বিরক্ত করবেন না।
নিউ লাইফ মাদকাসক্তি ও মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা জুয়েল বলেন, কেন্দ্রে ভর্তির পর আফরোজাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন তার দুই বোন ফোনে তার সঙ্গে কথা বলেছে। সব শেষ শনিবার রাতে তার প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে ফোনে ৪৫ মিনিট কথা বলেছে। এ নিয়ে মানসিকভাবে সে বিপর্যস্ত ছিল। ওই দিন রাত ৩টা ৩৯ মিনিটের দিকে সবার অলক্ষ্যে সে বাথরুমে গিয়ে আত্মহত্যা করে। রবিবার ভোরে তিনিই বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর থানা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিক আলামতে আফরোজা আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই