একটি বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতীয় কবিতা পরিষদ জাতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রয়াসে যৌথ মতবিনিময় সভার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার বিকেল ৫টায় তোপখানা রোডে 'বাংলাদেশ জাসদ' কার্যালয়ে জাসদের সঙ্গে ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে জাতীয় কবিতা পরিষদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়
কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৮৭ সালে অবৈধ ক্ষমতা দখলদার স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেশের গণতন্ত্রমনা প্রগতিশীল কবিরা জাতীয় কবিতা পরিষদ গড়ে তুলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু ২০০৮ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মুজিববাদী দলদাস কবিরা সর্বদলীয় সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাদের অস্ত্রের মুখে বের করে দিয়ে এই ঐতিহাসিক সংগঠনটিকে আওয়ামী লীগের দলীয় অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করে। তাদের বাড়ি, গাড়ি, অর্থবিত্ত, প্লট, পদ-পদবি, চাকরি ও পুরস্কারসহ নানা সুযোগ-সুবিধার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। শেখ হাসিনার বিনা ভোটের অবৈধ ক্ষমতার দুঃশাসনের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন অত্যাচার নির্যাতনকে বৈধতা দেওয়ার পক্ষে সাফাই গায়। এমনকি ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি তারা। হাসিনার পতনের পর আমরা প্রতিষ্ঠাতারা জাতীয় কবিতা পরিষদ পুনর্গঠন করে আমাদের প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গীকার–একটি শৃঙ্খল মুক্ত, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইকে এগিয়ে নিতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে অসংখ্য সাধারণ মানুষ মারা গেছেন। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছেন। আমরা হাসিনা সরকারের সমালোচনা করে লিখেছি। তাদের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, গুম ও জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছি। কিন্তু আমরা আওয়ামী কবিদের মতন কোন সুযোগ-সুবিধা দাবি করি না। অনেক আমলা আগে বৈষম্যে ছিলেন বলে সচিব হয়ে গেছে। তারা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলা দরকার। পাশের দেশগুলোর সাথে আমরা সংঘাতে জড়াব না কিন্তু আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যাগুলো নিয়ে কথা বলব। আমি আপনাদেরকে আহ্বান জানাবো, দেশের উন্নয়নে আপনারা কাজ করবেন, আমরা আন্তরিকভাবে আপনাদের পাশে থাকব।’
বাংলাদেশ জাসদ-এর সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘এখন জামায়াত অনেক এগিয়ে, তারা জাতীয় সংগীত বদলাতে চাইছে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলছে। হাসিনা যাওয়ার পরে সেনাপ্রধান প্রথমেই বলেছে, আমার সাথে জামায়াত ও অন্যান্য দলের কথা হয়েছে। এটার দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। হাসিনা আমাদের ব্যাংক খেয়ে ফেলেছে, সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান খেয়ে ফেলেছে, ইতিহাস খেয়ে ফেলেছে। এর থেকে মুক্তি অবধারিত ছিল। বাংলাদেশের বুর্জোয়া রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন এসে গেলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে বড় দলগুলোর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে হয়। একটা নির্ভরশীল গণতান্ত্রিক প্লাটফর্ম তৈরি করতে আমাদের সময় লাগবে। জবাবদিহিমূলক সমাজ যদি তৈরি করতে পারি তাহলে আমরা অনেকদূর এগোতে পারব। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হতে পারে, আবার না হওয়ারও অনেকগুলো কারণ আছে।’
বাসদের উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, ‘রাজনীতি হচ্ছে ইঞ্জিন আর সংস্কৃতি হচ্ছে পেট্রোল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে জনযুদ্ধ। এটা আওয়ামী যুদ্ধ না। এখন বলা হচ্ছে এটা আওয়ামী সংবিধান। এটা আওয়ামী সংবিধান না। এটা বাংলাদেশের সংবিধান। জনগণের যে আকাঙ্খা সেটা আওয়ামী লীগ বাস্তবায়ন করেনি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে। একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনাদের নিয়ে যাব।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করিম শিকদার, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য এটিএম মহব্বত আলী প্রমুখ। বাসদের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক রাকেমুজ্জামান রতন ও নিখিল দাস প্রমুখ। জাতীয় কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে কবি মতিন বৈরাগী, সহ-সভাপতি কবি এবিএম সোহেল রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি শ্যামল জাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক কবি নুরুন্নবী সোহেল, প্রচার সম্পাদক আসাদ কাজল, শান্তি ও শৃঙ্খলা সম্পাদক কবি ইউসুফ রেজা, দপ্তর সম্পাদক রোকন জহুর, জনসংযোগ সম্পাদক রফিক হাসান ও আইন সম্পাদক শিমুল পারভীন প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/শআ