রংপুর নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার কেজি ক্লিনিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে মাত্র ২ হাজার কেজি অপসারণ করা সম্ভব হয়। বাকি বর্জ্য অপসারণ না হওয়ায় নগরবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন না মানায় রংপুর নগরী ক্লিনিক্যাল বর্জ্যের দূষিত বাতাস ও পানির শহরে পরিণত হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্যের কারণে নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাই হুমকির মুখে পড়েছে। কয়েক বছর আগে রংপুর সিটি করপোরেশন একটি এনজিওর সঙ্গে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চুক্তি করলেও অধিকাংশ ক্লিনিক তা মানছে না।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম না মানা ক্লিনিকগুলোকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং অচিরেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বর্জ্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলে রাখায় নগরীর মাটি, পানি ও বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এতে হৃদরোগ, চর্মরোগ ও শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ মেট্রিক টন বর্জ্য জমে। এর মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা থাকলেও পুরোপুরি অপসারণ সম্ভব হয় না। ক্লিনিক্যাল বর্জ্যই সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন ক্লিনিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হলেও এর অর্ধেকই অপসারণের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীতে একটি সরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০০ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার কেজি ক্লিনিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই বর্জ্য পাঁচ ধরনের—সংক্রামক, ধারালো, পুনঃচক্রায়নযোগ্য, তরল ও সাধারণ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সংক্রামক বর্জ্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। এটি অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে মিশে জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে।
অন্যদিকে জানা গেছে, এক শ্রেণির অসাধু ক্লিনিককর্মী এসব বর্জ্য ফেরিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করে, যারা তা আবার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখে। ফলে এসব জীবাণুযুক্ত বর্জ্য থেকে মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হচ্ছে।
রংপুরের জেলা স্যানিটারি কর্মকর্তা মো. মাহবুবার রহমান বলেন, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব সিভিল সার্জন অফিসের নয়, এটি সিটি করপোরেশন দেখে। তবে এ বর্জ্য থেকে যে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, তার প্রতিকার হওয়া জরুরি।
রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দপ্তরের প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা ২০০৮ সম্পর্কে অনেক ক্লিনিক মালিকেরই ধারণা নেই। আমরা একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছি, যারা নিয়ম অনুযায়ী বর্জ্য ধ্বংস করছে। যারা আইন মানছে না, তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল