আত্মগোপনে থেকেই সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। আবার কারাবন্দী থেকেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দুর্ধর্ষ সব জঙ্গি। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আত্মপ্রকাশের পর থেকে জেএমবির জঙ্গিরা এখনো সক্রিয়। নয় বছর পেরিয়ে গেলেও সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে দায়ের করা ১৬১টি মামলার মধ্যে ৫৯টি মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় জঙ্গিরা এখনো অনেক সাবলীল। এরই মধ্যে দুর্ধর্ষ জেএমবির জঙ্গিরা চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ খুন করে কমান্ডো স্টাইলে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে ৪০০টি স্থানে একযোগে প্রায় সাড়ে ৫০০ বোমা হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা এবং ২ শতাধিক মানুষকে আহত করে দুর্ধর্ষ এই জঙ্গিরা। এ পর্যন্ত ১০২টি মামলার রায়ে ৪৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১১৮ জনের যাবজ্জীবন, ৯৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে ১১৮ জন খালাস পেয়ে যান। বিভিন্ন মামলা থেকে ৩৫ জন জামিন নিয়ে ও ৫৭ জন পলাতক রয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও বাকি ৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এখনো কার্যকর হয়নি। ইতিমধ্যেই তারা দণ্ড থেকে বাঁচতে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। অন্যদিকে, সিরিজ বোমা হামলাসহ বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৬৪ জন শীর্ষ জঙ্গি পলাতক থেকেই জেএমবি-কে সক্রিয় করার প্রাণান্তকর চেষ্টায় লিপ্ত। ২০০৭ সালে শীর্ষ ৬ জঙ্গি নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর আর কারও ফাঁসি কার্যকর করা যায়নি। আবার বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৩৫ জন ইতিমধ্যেই খালাস ও জামিন পেয়ে গেছে। তবে দেশের বিভিন্ন কারাগারে এখনো আটক রয়েছে প্রায় এক হাজার জঙ্গি সদস্য। কারাগারে বসেই শীর্ষ জঙ্গিরা তাদের অনুসারীদের পরিচালনা করছে। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে পুলিশ সদস্য এবং কারাগারের দুর্নীতিবাজ সদস্যদের ম্যানেজ করে তারা তাদের দিক-নির্দেশনাগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছে অনুসারীদের কাছে। কয়েক দফা কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও সেখানে জঙ্গিদের তৎপরতা ঠেকানো যাচ্ছে না। মূলত খালাস ও জামিন পাওয়া এসব সদস্যই সংগঠনকে আবার সক্রিয় করে তুলছে। নতুন করে সদস্য সংগ্রহ ছাড়াও সংগঠিত করছে জঙ্গি দল। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা চারজন জেএমবির সদস্যকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য আদায় করতে পেরেছে। এসব তথ্য এখন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলার দিন ১৫৯টি এবং আগে ও পরে মিলিয়ে জঙ্গি সংক্রান্ত মোট ৩১৫টি মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে এখনো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অনেক মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে অনেক মামলা এবং রায় ঘোষণা হয়েছে ১৬০টি মামলার। চূড়ান্ত পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ১৫টি মামলার। বিভিন্ন মামলায় বিচারের রায়ে ৩৫ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৩৫ জঙ্গিকে যাবজ্জীবন ও ২৬৯ জঙ্গিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। রায় ঘোষণাসহ মোট পলাতক আসামি ১৭৫ জন, রায় ঘোষণাসহ মোট জামিনে আছে ৩৫৭ জন। বেকসুর খালাস পায় ১৭০ জন। পালিয়ে থাকা আসামিদের গ্রেফতার কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে। তবে সিআইডি ও র্যাবের পরিসংখানে মামলার আসামি, গ্রেফতার কিছুটা গরমিল রয়েছে। ২০১২ সালের ১৭ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত মামলার সর্বশেষ পরিসংখ্যানে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। সিআইডি থেকে বারবার চেষ্টা করে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে র্যাব থেকে সারা দেশের সব মামলার কিছু তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে জেএমবির এক সময়কার সামরিক শাখা প্রধান সোহেল মাহফুজ সংগঠনের হাল ধরেছে।
মৃত্যুদণ্ড মওকুফে ৩৯ জনের আপিল : র্যাব সূত্রে জানা যায়, জেএমবির সিরিজ বোমা হামলাসহ অন্যান্য বোমা হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত আদালত ৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও বাকি ৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এখনো কার্যকর হয়নি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামি দণ্ড থেকে বাঁচতে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। আপিল করা ৩৯ আসামির মধ্যে জামালপুরের মেলান্দহ থানার ফুলছেন্না গ্রামের হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান ওরফে হায়দার, নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সজিব, নওগাঁর নিয়ামতপুরের আবদুল কাইউম, বগুড়ার শেরপুর থানার খামারকান্দি গ্রামের হাফেজ মো. মিনহাজুল ইসলাম ওরফে সোহেল রানা ওরফে সানোয়ার হোসেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সাতপোয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামান, খুলনার রূপসার রামনগর থানার তরিকুল ইসলাম ওরফে রিংকু, ঝিনাইদহের শিকারপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মোখলেছুর, একই গ্রামের নাসরুল্লাহ ওরফে শান্ত, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দেবরাজপুর গ্রামের রোকনুজ্জামান ওরফে সিবুন, গাইবান্ধার ব্রিজ রোডের জাতীয় সংসদ ভবনের সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবু তালেব আনছারী ওরফে বাবুল আনছারী, ঝিনাইদহের মোহন, মামুনুর রশিদ, মুহিত, মোজাম্মেল হক ওরফে মোজাম, তুহিন রেজা, সবুজ আলী ও ফারুক হুসাইন, গাইবান্ধার ব্রিজ রোডের মতিন মেহেদী ওরফে মতিনুর ইসলাম, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের আড়পাড়ার মহিরুল আল মামুন ওরফে চাঁদ, ঝিনাইদহ সদরের বেপারিপাড়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন, মোল্লাকোপ গ্রামের সাহাব উদ্দিন, শৈলকুপার দেবীনগর গ্রামের রবজেল হোসেন ওরফে রবজেল ও আজিজুর রহমান। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী শ্রীকোল গ্রামের শহীদুল্লাহ শেখের ছেলে আবু সাইদ শেখ, ঝিনাইদহের ইউনুস ও শৈলকুপার দেবীনগর গ্রামের তেভারত আলীর ছেলে আজিম উদ্দিন।
৬ জনের ফাঁসি কার্যকর : ১৭ আগস্ট হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ ৭৪৭ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি আসাদুর রহমান আরিফ পলাতক রয়েছে। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। ৬ জঙ্গির পরে আর কারও ফাঁসি কার্যকর হয়নি।
নামে-বেনামে সক্রিয় : র্যাব কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে জঙ্গি সংগঠনগুলোর পলাতক সদস্যরা এখন নামে-বেনামে ও ভিন্ন পরিচয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। জেএমবি, জেএমজেবি, হুজি, শাহাদত-ই-আল হিকমা ও হিযবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও নতুন নামে তারা তাদের জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে র্যাব। এ ছাড়া ঝালকাঠি থেকে গত বছরের শেষ দিকে তা’আমীর উদ্দিন নামে অপর একটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ কয়েক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাই আবারও নতুন নামে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্স (এআরসিএফ), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাওহীদ, তা’আমীর উদ্দীন, লস্কর-ই-তৈয়বা, জয়স-ই-মোহাম্মদসহ দেশে অন্তত ২০টি জঙ্গি সংগঠন এখনো সক্রিয়। তারা অত্যন্ত গোপনে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকায় তারা প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পাচ্ছে না।
র্যাব সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে র্যাব গঠিত হওয়ার পর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১ হাজার ৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে ৭৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩ হাজার রাউন্ড গুলি, ৬২৪টি গ্রেনেড, ১ হাজার ৮১১ কেজি বিস্ফোরক ও বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ২০০৫ সাল থেকে যেসব জঙ্গি পলাতক ছিল তাদের অনেককেই আটক করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। তবে তাদের কেউ কেউ ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও তা একেবারেই ক্ষীণ। তারা যাতে কোনোভাবেই সংগঠিত হতে না পারে সে তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য র্যাবের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নে জঙ্গি বিষয়ক বিশেষ সেলগুলো কাজ করছে।
শিরোনাম
- আইফোন ১৭-কে টপকে যাবে অ্যান্ড্রয়েড?
- 'একজন যোদ্ধা', ইরফানকে নিয়ে যা বললেন ছেলে বাবিল
- “সবাই খুনি”—সীমা পাহওয়ার বলিউড ত্যাগের নেপথ্য ক্ষোভ
- গাজীপুরে স্বাস্থ্যসেবা টেকসই করতে ওরিয়েন্টেশন সভা
- রেনাটার পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের মহৎ উদ্যোগ
- ফেনীতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে স্বর্ণ ও নগদ অর্থ লুট
- বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেল স্টারলিংক
- পরশুরামে সিএনজি চুরির হিড়িক, ঘরের তালা ভেঙে উধাও
- সুবর্ণা, শাওনসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা
- ‘অনুমানে দুইয়ে দুইয়ে চার না মেলানোই ভালো’
- আরাকান আর্মির বন্দিদশা থেকে ২০ দিন পর দেশে ফিরলেন মুফিজ
- গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ, বাবা-ছেলে গ্রেফতার
- নবীনগরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০
- সচিবালয়ে স্টিকারবিহীন যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
- ভারতে পাঠ্যবই থেকে বাদ মোগল-সুলতানি ইতিহাস
- কাশ্মীর ইস্যু: প্রতিশোধ নিতে সামরিক হামলার ‘সবুজ সংকেত’ দিলেন মোদি
- শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ
- ২০ দিন পর আরাকান আর্মির বন্দিদশা থেকে ফিরলেন মুফিজুর রহমান
- যশোরে গৃহবধূ হত্যায় স্বামী ও সৎ ছেলে গ্রেফতার
- মার্কিন শুল্কযুদ্ধ, ১৪৫ শতাংশ ‘আমদানি চার্জ’ যোগ করল টেমু
দেশে সিরিজ বোমা হামলার দিন আজ
৬৪ শীর্ষ জঙ্গি অধরাই
এখনো বিচারাধীন ৫৯ মামলা কারাবন্দী থেকেও অনেকে সক্রিয়
সাখাওয়াত কাওসার ও আলী আজম
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর