সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যুপুরী পাথর কোয়ারি

অ্যাকশনে প্রশাসন, কৌশলী অভিযানে থেমেছে লাশের মিছিল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

মৃত্যুপুরী পাথর কোয়ারি

সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো যেন হয়ে উঠছে মৃত্যুপুরী। অবৈধভাবে মাটির নিচ থেকে পাথর তুলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। গর্তের ভিতর মাটিচাপায় বাড়ে নিহতের সংখ্যা। গত এক মাসে সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারিতে অন্তত সাতজনের প্রাণহানি হয়েছে। আর গত তিন বছরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮০ জন। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত বোমা মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হলেও থামেনি এই পরিবেশবিরোধী ধ্বংসযজ্ঞ। এমতাবস্থায় পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে কৌশলী অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। বিভিন্ন কোয়ারিতে অভিযান চালিয়ে পাথরের গর্ত পানি দিয়ে ভর্তি করার পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কোয়ারিতে তৈরি শ্রমিকদের অস্থায়ী বাসস্থান। সেই সঙ্গে প্রশাসনের উপস্থিতিতে কোয়ারি থেকে শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিজ নিজ বাড়িতে। ইতিমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ কালাইরাগ ও একই উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা কোয়ারি থেকে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গো ব্যাক অ্যাকশন’। এই অভিযানের পর কোয়ারিগুলোতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানুয়ারি থেকে সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারিতে শুরু হয় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কোয়ারিগুলোতে গভীর গর্ত করে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করেন প্রভাবশালীরা। মাঝে-মধ্যে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বোমা মেশিনসহ পাথর উত্তোলনের যন্ত্রপাতি ধ্বংস করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই ফের শুরু হয় অবৈধ কর্মকান্ড। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে গত এক মাসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭ শ্রমিক।  গত ৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্যের নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জের কালাইরাগ কোয়ারিতে অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। সেখানে পাথর উত্তোলনের ২১টি গর্ত পানি দিয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ধ্বংস করা হয় পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ৩১টি লিস্টার মেশিন ও ৭ হাজার ফুট পাইপ। কিন্তু এরপরও পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় পরদিন আবারো অভিযান চালানো হয় কালাইরাগে। ওইদিন পুড়িয়ে দেওয়া হয় কোয়ারিতে নির্মিত শ্রমিকদের বাসস্থান (তাঁবু)। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কোয়ারি ত্যাগে বাধ্য করেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিককে। একইভাবে ৬ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালানো হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলায়। সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিক। এই অভিযানের পর থেকে কোয়ারিগুলোতে চরম শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। শ্রমিক না পেয়ে প্রভাবশালীরা পাথর উত্তোলনের নামে পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অভিযানের পর থেকে ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন প্রায় বন্ধ রয়েছে। আর শাহ আরেফিন টিলা কোয়ারিতেও কমে এসেছে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন।

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য ও থানার ওসি সজল কানু জানিয়েছেন, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা ও উৎমাছড়া কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। পাথর উত্তোলন বন্ধে শ্রমিকদের কোয়ারি ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এখন থেকে কাউকে পরিবেশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। শ্রমিকরা চলে যাওয়ায় কোয়ারিগুলোতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর