রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

রাবিতে রংতুলির ছোঁয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাবিতে রংতুলির ছোঁয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের পশ্চিম পাশের দেয়ালে রংতুলি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। কেউ প্লাস্টিকের পাত্রে রং তৈরি করছেন। আবার কেউ সেই রং দিয়ে সাদা দেয়াল রাঙিয়ে তুলছেন। একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র করে অঙ্কন করা হচ্ছে এই দেয়ালচিত্রটি। রংতুলির আঁচড়ে দেয়ালচিত্রে ফুটে উঠছে বাংলাদেশের ইতিহাস। দেয়ালটির গায়ে ছোঁয়া লেগেছে হরেক রকমের রংতুলির। বিশাল এই দেয়ালচিত্রটি দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী। যা মনে করিয়ে দিচ্ছে দেশ ভাগ থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ স্বাধীন হওয়ার আগের এবং পরবর্তী মুহূর্তগুলো। বিমূর্ত ধারার বিশাল এই চিত্রকর্মটি তৈরিতে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার বন্যা, প্রসেনজিৎ মিস্ত্রী, রায়হান আহমেদ, সুভাষ পাল এবং সৌমিত্র কুমার। আর তাতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক। চিত্রকর্মটিতে বামপাশে শুরুর দিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের সময়কালের সেই ভয়াবহতা। পরবর্তীতে শহীদ মিনারের চিত্র। মাঝ বরাবর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বর্বরতার দৃশ্য, এরপরেই বাঙালির কাক্সিক্ষত বিজয় অর্জনের প্রতিচ্ছবি। আর সবশেষে ডানপাশে বই বুকে স্কুলে যাওয়া শিশুদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের আবহমান দৃশ্যাবলি।

চারুকলার শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ মিস্ত্রী জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা দেয়ালচিত্র অঙ্কনের কাজটি শুরু করেছেন।

হাতে বেশি সময় না থাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লাইট জ্বালিয়ে কাজ করছেন তারা। দেয়ালচিত্রটি অঙ্কন করতে বেশ ভালোই লাগছে বলে জানান তিনি। এই দেয়ালচিত্রটির খসড়া তৈরি করেছেন চারু শিক্ষার্থী শামীমা আকতার বন্যা। তিনি বলেন, ‘দেয়ালচিত্রটির লে-আউট বানাতে পাঁচ দিনের মতো সময় লেগেছে। চিত্রকর্মটিতে দেশ ভাগের পূর্ব থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আর কাজটি করে অনেক ভালো লাগছে। কারণ আমরা চারু শিক্ষার্থীরা কাজের মধ্যে থাকলেই নতুন কিছু শিখতে পারি। নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করতে পারি।’

মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক বলেন, ‘এই দেয়ালচিত্রটি অনুধাবন করলে দেখা যাবে, যে ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙালিদের বুকের তাজা রক্ত ঝরেছিল। সেই ভাষায় রচিত বই এখন আমরা বুকে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই। বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাসকে এই দেয়ালচিত্রটিতে ধাপে ধাপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চিত্রটির বামপাশ থেকে যদি দর্শনার্থীরা দেখা শুরু করেন তাহলে ডান পাশে যেতে যেতে চিত্রকর্মটির প্রেক্ষাপট জেনে ফেলবেন। চিত্রকর্মটিই দর্শনার্থীকে বলে দেবে সে কিসের বার্তা বহন করছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর