মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

গণপরিবহন ভোগান্তিতে কর্মজীবী নারী

বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

জিন্নাতুন নূর

স্বাভাবিক সময়েই কর্মজীবী নারীরা পরিবহন সংকটের জন্য ভোগান্তি পোহাতেন। প্রাণঘাতী মহামারী করোনা শুরুর পর সরকারঘোষিত লকডাউনে এই ভোগান্তি ও দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়েছে। গণপরিবহনে ওঠার জন্য কর্মজীবী নারীদের এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর একটি পরিবহন মিলতেই পড়িমড়ি করে উঠতে গিয়ে অনেক নারী আহত হচ্ছেন। অনেক নারীর অভিযোগ- চালকের সহকারী (হেলপার) তাদের বাসে উঠতে দিচ্ছে না। এ ছাড়া সন্তানসহ যে মায়েরা কাজের জন্য ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তারাও নানারকম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় কর্মজীবী নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের কথা বিবেচনা করে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন না হলে বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থাসহ অফিস থেকে নারীদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করে দিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারিভাবে রাজধানীতে নারী যাত্রীদের পরিবহনের জন্য বিআরটিসির ২২টি মহিলা বাস সার্ভিস কাগজে-কলমে থাকলেও বর্তমানে চালু আছে মাত্র চারটি। বেসরকারিভাবে দুটি রুটে দোলনচাপার চারটি মহিলা বাস সার্ভিস চালু আছে। এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। করোনার দ্বিতীয় ধাপে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার শর্তে সরকার বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে। হাতেগোনা দুই-একটি বাসে এই নিয়ম মানা হলেও বেশিরভাগ বাসেই সব আসন ভর্তি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অফিস ছুটির পর গণপরিবহনে ওঠার জন্য অনেক নারী রাত ৮টা পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডগুলোতে অপেক্ষা করছেন। যাত্রা শুরুর পয়েন্ট থেকেই বাসভর্তি হয়ে যাওয়ার মাঝপথে নারীসহ অন্যরা বাসে উঠতে পারছেন না। এতে নারী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

গতকাল মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুরগামী একটি বাসে ওঠার জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে মধ্যবয়সী নারী দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাহফুজা খানম নামের সেই নারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বনানীর একটি বাসায় আয়ার কাজ করেন। প্রতিদিন বাসে করে গাজীপুরে বাসায় যান তিনি। লকডাউনে সড়কে তুলনামূলক কম বাস নামায় গত কয়েকদিন তার বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে। অনেকটা ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে গিয়ে দুই দিন আগে হাতে ব্যথাও পেয়েছেন। মিরপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকরাও লকডাউনে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিন স্বাভাবিক সময়ের মতো বাস না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে নিজ গন্তব্যে গেছেন। কেউ কেউ উপায় না পেয়ে উত্তপ্ত রোদে সহকর্মীর সাইকেলে চেপে বাড়ির পথ ধরছেন। কথা হলে রিমা আক্তার নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘মিরপুর-১২ নম্বর থেকে বাসে করে ১০ নম্বরে নিজের বাসায় যেতাম। লকডাউনের কয়েকদিন অল্পসংখ্যক বাস রাস্তায় নামছে। এতে পুরুষদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে হচ্ছে।’ রিমার সহকর্মীদের অনেকে আবার বাসে ওঠার সুযোগ না পেয়ে ব্যয়বহুল হলেও রিকশায় করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাভাবিক সময়েই গণপরিবহনের ভয়াবহ সংকট থাকে। মহামারীতে এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এর মধ্যে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রীবহনের সিদ্ধান্তটি সরকার যাত্রীর সুরক্ষার জন্য নিলেও তা আত্মঘাতী হয়েছে। বাসে নারীদের সিট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকদের। পরিবহন যেহেতু সেবা খাত এ জন্য এ খাতে কেউ দুর্ভোগে পড়লে তা দূর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সরকারের কাছে কর্মজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারীদের এই দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে অনুরোধ করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর