অন্তরা বেগম ফজিলা আর শিরিনা খাতুনের অভিভাবক নেই। রাজশাহীতে দুজনেই ছিলেন সমাজসেবা অধিদফতরের মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনে (সেইফহোম)। দুজনেরই বয়স হয়েছিল ৩৩। গত শুক্রবার তাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। পবা উপজেলার বায়ায় এ সেইফহোমে ধুমধামেই বিয়ের আয়োজন হয়। বিয়েতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল ও পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুই বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী এসেছিলেন আরও প্রায় ৪০ জন।
অন্তরাকে বিয়ে করেছেন মহানগরীর বড়বনগ্রাম দুরুলের মোড় এলাকার মো. বিপ্লব (৪২)। আর শিরিনাকে বিয়ে করেছেন পবার পিল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন (৫০)। দুজনেরই স্ত্রী মারা যাওয়ায় পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়ে করলেন। দুজনেরই বিয়ের দেনমোহর করা হয়েছে ১ লাখ টাকা।
বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন সেইফহোমে বরদের জন্য একটি গেট বানানো হয়েছিল। পাশেই একজন বসে অতিথিদের আনা উপহারসামগ্রী গ্রহণ করছিলেন। আরেকটু সামনে দুই কনের গায়ে হলুদের প্যান্ডেল। সেখানেই বসেছিলেন বিপ্লব আর ইসমাইল। ডিসি-এসপির সামনে মুখে রুমাল দিয়ে বসেছিলেন তারা। বিপ্লব জানান, কয়েক বছর আগে দুই ছেলে-মেয়েকে রেখে তার স্ত্রী মারা গেছেন। তাই তিনি সবার সম্মতিতে এই বিয়ে করছেন। বিপ্লবের সঙ্গে তার ছেলে-মেয়েও এসেছিলেন। বিপ্লব একজন ব্যবসায়ী। আর ইসমাইল হোসেন অটোরিকশার চালক। তারও স্ত্রী মারা গেছেন। ইসমাইলের সঙ্গে এসেছিলেন তার বেয়াই, ভাগনে, দুই পূত্রবধূ, নাতি-নাতনিসহ ১৫ জন। বিয়ের জন্য ইসমাইল হাতে মেহেদি দিয়ে এসেছিলেন। আর দুই বরই পরে এসেছিলেন একই রঙের পাঞ্জাবি।বর ইসমাইল হোসেন জানান, ঘটকের মাধ্যমে এ বিয়ের ব্যবস্থা। বিয়ের আগে তিনি এসে পাত্রী দেখে গেছেন। তার পাত্রী পছন্দ হয়েছে। ইসমাইলের দুই পূত্রবধূ জয়া বেগম ও দিলরুবা বেগম জানালেন, শ্বশুরের এই বিয়েতে তারা খুব খুশি। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সেফহোমেই ৪৫ কেজি খাসির মাংস, ৫৫ কেজি মুরগির রোস্ট, ২০ কেজি মাছ, ২২ কেজি পোলাও চাল রান্না করা হয়। সাদাভাত, ডাল, মিষ্টি এবং দইয়েরও ব্যবস্থা ছিল। সেফহোমের পক্ষ থেকেই এসব আয়োজন করা হয়। বিয়ের পর ডিসি-এসপি, আমন্ত্রিত অতিথিসহ বরযাত্রীরা এই খাবার খান।
জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, অভিভাবকহীন দুই নারীকে পারিবারিক বন্ধনে দিতে পেরে ভালো লাগছে। বিয়েতে নিজেরা খুশি বলে জানিয়েছেন অন্তরা-শিরিনাও। সেফহোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক জানান, অভিভাবকহীন এ দুই নারীকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পঞ্চগড়ের একটি আদালত ২০১০ সালে অন্তরাকে এই সেফহোমে পাঠান। একই বছর শিরিনাকে সেফহোমে পাঠান রংপুরের আদালত। তাদের বিয়ের প্রস্তাব এলে সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি নেওয়া হয়। এরপরই বিয়ের আয়োজন করা হয়। দুই নারীর বিয়ে দিতে পেরে তিনিও খুশি।