বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বাজেট নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য সরকারি ও বিরোধী দলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট সমন্বয়হীন। বাজেটে পাচার করা টাকা ফেরত আনার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ বাজেট অবশ্যই জনবান্ধব নয়। মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়াবে এ বাজেট। অন্যদিকে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি বাজেট বাস্তবায়ন করে দেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল স্পিকারের সদস্য শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের বৈঠকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সরকারি দলের সাবের হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, আরমা দত্ত, সাইফুজ্জামান শিখর, মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন, মোজাফফর হোসেন, আনোয়ারুল আবেদীন খান, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আমিরুল ইসলাম মিলন, শফিকুল ইসলাম শিমুল, বিএনপির জাহিদুর রহমান ও জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রস্তাবিত বাজেটকে সমন্বয়হীন, পলিথিন দূষণ ও অনৈতিক বাজেট উল্লেখ করে বলেন, বাজেটে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ বাজেট অবশ্যই গণবান্ধব নয়। মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়াবে, দরিদ্রদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।

এ বাজেট আয় কম, ব্যয় বেশি এবং বিপুল পরিমাণ ঘাটতির বাজেট। ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের প্রবণতার কারণে কর্মসংস্থান কমবে।

বিএনপির জাহিদুর রহমান বলেন, এ বাজেট গণমানুষের নয়, বরং লুটেরা, অর্থ পাচারকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানের বাজেট। অর্থ পাচারকারীদের আরও অর্থ পাচারে উৎসাহিত করার জন্য এ বাজেট দেওয়া হয়েছে। অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তি দেওয়া অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য। বরং পাচারকারীদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দায়মুক্তির প্রস্তাব বাজেট থেকে বাদ দিতে হবে। বাজেটে গরিব মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই।

সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সাহসী, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ করোনা মহামারির মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হয়ে দেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বদলে যাবে দেশের চিত্র।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল, সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। টানা তিনবার আওয়ামী লীগকে জনগণ ম্যান্ডেট দিয়েছিল বলেই দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের চিত্র বদলে গেছে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে তামাক সেবনের কারণে। বাজেটে আমরা সিগারেটের মূল্য ১ টাকা বাড়িয়ে তার ওপর কর বাড়াই। তা হবে কেন? আমরা সুনির্দিষ্ট কর বাড়াতে চাই। আমরা এখানে সংসদে নিশ্চয়ই আসিনি তামাক কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর জন্য। তাহলে বিগত বছরে আমরা ৩ হাজার কোটি টাকা তামাক কোম্পানিকে দিয়ে দিলাম কেন? সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে এ ৩ হাজার কোটি টাকা তো সরকারের কাছে আসত। আমরা তাহলে কী করলাম?

সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও দেশকে এগিয়ে যাওয়ার বাজেট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই বাজেট দিয়েছে, দেশ এগিয়ে গেছে। দেশের কিছু মানুষ ও দল আছে তারা দেশের কোনো উন্নয়ন চোখে দেখে না, শুধু সর্বনাশ দেখে।

সরকারি দলের ড. আবদুস সোবহান মিয়া বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, খুনিদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি দিয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে, ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো বন্ধ করেছিল সেই খুনি জিয়ার হাতে অবৈধভাবে গঠিত দল বিএনপির প্রেতাত্মারা এখন নানা ষড়যন্ত্র করছে।

ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, দেশ যখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে ব্যর্থ করতে নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আরমা দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলেই ফিনিক্স অর্থাৎ আগুনপাখি। টানা ১৭ বার বাজেট দিয়ে সারা বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ধারায় দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়ন রোল মডেল বলে স্বীকৃত। বিএনপি আসলে একটি বেইমান দল। তারা বঙ্গবন্ধুকে মেরেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করেছে।

অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, অসাধ্য সাধনের নামই হচ্ছে শেখ হাসিনা। আর মিথ্যাচার করে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অতীতে তারা বলেছে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে, খালেদা জিয়া পর্যন্ত বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। জনগণ তাদের মিথ্যাচারে আর বিভ্রান্ত হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর