বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বড়লোক হওয়ার নেশায় মোটরসাইকেল চুরি

চোর চক্রের পাঁচজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোটরসাইকেল চোর চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার রাজধানীর শনিরআখড়া ও ধলপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- চক্রের হোতা নুর মোহাম্মদ (২৬), সহযোগী রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। পুলিশ বলছে, তারা বড়লোক হওয়ার নেশায় গত আট বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চুরি করা মোটরসাইকেলগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের। 

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করত নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা। বাইক চুরির জন্য চক্রটি বিশেষভাবে মাস্টার কি (নকল চাবি) তৈরি করে। সুযোগ বুঝে নকল চাবির মাধ্যমে টার্গেট বাইকটি স্টার্ট করা মাত্রই সেটি নিয়ে পালিয়ে যেত। এভাবে পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে অন্তত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করেছে নুর মোহাম্মদ। এরপর ঢাকার কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় চোরাই মোটরসাইকেল কম দামে বিক্রি করত। সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী ও গেন্ডারিয়ায় দুটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের পাঁচ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রথমে মোটরসাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য নুর মোহাম্মদ ও রবিনকে শনিরআখড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধলপুর থেকে সজল, মনির ও আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। চুরির জন্য তাদের লক্ষ্যস্থল পুরান ঢাকা। আর নুর মোহাম্মদ মূলত জুরাইনে একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করত। আগে তার বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায়। এক দিন হাসনাবাদ গলির ভিতর চায়ের দোকানে রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয়।

দুজন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুত সময়ে বড়লোক হওয়া যায়। নুর মোহাম্মদ তখন রবিনকে বলে, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে কেরানীগঞ্জের শারিঘাটে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলকভাবে চুরি করে। এরপর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা ঢাকার দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করে। মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেলগুলো ভারত থেকে আনা গাড়ি বলে বিক্রি করে আসছিল। সজল নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনাঢ্য বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামি নুর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেয়। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। বিক্রির টাকা নুর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্যরা ভাগ করে নিত। বিভিন্ন থানায় নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর