বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল

উন্নয়নের নামে জনদুর্ভোগ

‘জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে উন্নয়ন নয়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা উপেক্ষা

রাহাত খান, বরিশাল

উন্নয়নের নামে জনদুর্ভোগ

শেরেবাংলা মেডিকেলের প্রধান ফটক নির্মাণের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো রোগী ও তাদের স্বজনসহ ডাক্তার-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ করে অপারেশন থিয়েটার ব্লক, কার্ডিওলজি বিভাগ, আইসিইউ, প্রসুতি, সার্জারি এবং শিশু ওয়ার্ডের রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগের শেষ নেই। জরুরী মুহূর্তে অপারেশন থিয়েটারের রোগীদের জন্য দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ওষুধ আনতে হয় স্বজনদের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটক নির্মাণের নামে হাজার হাজার রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তিতে ফেলেছে গণপূর্ত বিভাগ। ‘জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে উন্নয়ন নয়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাসপাতালের জনসাধারণের চলাচলের পথ আটকিয়ে গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে হাসপাতালের পঞ্চম তলায় থাকা অপারেশন থিয়েটার ব্লক, কার্ডিওলজি বিভাগ, আইসিইউ, প্রসূতি, সার্জারি এবং শিশু ওয়ার্ডের রোগী ও স্বজনরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অপারেশন থিয়েটারের রোগীদের জন্য জরুরি মুহূর্তে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ওষুধ আনতে হয় স্বজনদের। ১৯৬৮ সালে নির্মিত বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলের পঞ্চম তলা ভবনটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৯৬০ ফুট দীর্ঘ। ভবনে যাতায়াতের জন্য তিনটি ফটক রয়েছে। মাঝখানের প্রধান ফটক এবং পশ্চিমপাশের ফটকটি রোগী-স্বজন, ডাক্তার-নার্সসহ অন্যান্যদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় সারাদিন। রাত ১১টার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় মূল ভবনের মাঝখানের কলাপসিবল গেট। পূর্বপাশের গেট থাকে আটকানো। এক হাজার শয্যার পুরনো জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার কিংবা ঘাটতি জনবল নিয়োগ না করে সম্প্রতি প্রধান ফটক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গেট নির্মাণের প্রাক্কলন করা হয়। আপত্তি উঠলে গণপূর্ত বিভাগ বরাদ্দ কাটছাঁট করে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার প্রাক্কলন তৈরি করে। প্রথম পর্যায়ে ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। গত সপ্তাহে প্রধান ফটক নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফারদিন বিল্ডার্স। সরেজমিন দেখা যায়, পুরনো প্রধান ফটকটি ভেঙে সেখানে স্কেভেটর দিয়ে ১৬০ ফুট পুকুরের মতো মাটি খনন করা হয়েছে। কেটে ফেলা মাটি টিলার মতো উঁচু করে রাখা হয়েছে পাশে। বান্দ রোড লাগোয়া পুরনো প্রধান ফটকের প্রবেশ পথ লোহার গ্রিল দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। প্রধান ফটকের সড়কে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। সড়কের ওপর টিন-কাঠ-বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে স্টোর। এ কারণে প্রধান ফটক বা ফটকের সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারে না কেউ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, এই হাসপাতালের বিভিন্ন আন্তওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ৮০০ রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। তাদের সঙ্গে থাকেন আরও ৪ হাজার স্বজন। সরকারি খোলার দিনে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসেন আরও অন্তত ২ থেকে আড়াই হাজার রোগী। তাদের সঙ্গে থাকেন হাজারো স্বজন। প্রতিদিন এই হাসপাতালের আসা-যাওয়া করে শতাধিক ডাক্তার, ৫ শতাধিক নার্স এবং কয়েক শ কর্মচারী। তাদের বেশির ভাগ চলাচল প্রধান ফটক দিয়ে। কিন্তু গত চার দিন ধরে প্রধান ফটকের চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সীমাহিন দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো জনসাধারণ।

গেট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল হোসেন জানান, পিলারের ওপর স্লাব আকৃতির গেটে ছোট-বড় ১৮টি কলাম নির্মিত হচ্ছে। ১৬ ফিট উঁচু এবং ১০০ ফুট লম্বা গেটে আসা-যাওয়ার প্রবেশ পথ আলাদা। থাকবে দুটি পকেট গেট। গেট নির্মাণে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার বিপরীতে প্রথম পর্যায়ে ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এই টাকায় যতটুকু নির্মাণ করা যায় সেটুকু নির্মাণ করে বাকি টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পুরো বরাদ্দ পাওয়া গেলে নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যে গেটটি নির্মাণ করা হবে। অন্যথায় কাজ বন্ধ থাকবে। হাজারো রোগী-স্বজন, ডাক্তার-কর্মচারীর দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রধান ফটকের চলাচল বন্ধ করে গেট নির্মাণ করতে গণপূর্তকে নিষেধ করেছিলাম। তারা শোনেনি। বিকল্প পথের ব্যবস্থা করে গেট নির্মাণ করা উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে আবারও গণপূর্ত বিভাগে কথা বলবেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান বলেন, সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন তিনি। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর