শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটে পিঠা উৎসবে প্রাণের উচ্ছ্বাস

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে পিঠা উৎসবে প্রাণের উচ্ছ্বাস

পৌষ পেরিয়ে এক সপ্তাহ হলো মাঘে পা রেখেছে প্রকৃতি। এই সময়ে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে থাকে পিঠাপুলির উৎসব। নগরজীবনে এমন উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ খুব কমই মেলে। তবে গতকাল সিলেট নগরবাসীর সুযোগ হয়েছিল গ্রাম বাংলার চিরায়ত পিঠা উৎসবে মেতে ওঠার। সেই সুযোগ করে দেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি। প্রতিবারের মতো এবারও তারা নগরের সুবিদবাজারে ব্লু-বার্ড স্কুলমাঠে আয়োজন করে দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের। এটি ছিল শ্রুতির ২১তম পিঠা উৎসব। গ্রামের বাহারি নাম আর স্বাদের পিঠার সঙ্গে শহুরে শিশু-কিশোরদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাই পিঠা উৎসবের খবর পেয়ে সকাল থেকে ব্লু-বার্ড স্কুলমাঠে ছুটে আসতে থাকে তারা। সকাল ৮টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন বরেণ্য অভিনয়শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। উৎসবের মাঠজুড়ে স্টল সাজানো হয় বাহারি নাম ও স্বাদের পিঠা দিয়ে। এর মধ্যে ছিল চুঙা পিঠা, ঝালা পিঠা, নকশি পিঠা, মেড়া পিঠা, ছই পিঠা, দিলখোশ পিঠা, মুস্কু পিঠা, পানতোয়া পিঠা, চিতই পিঠা, মঞ্জুরি পিঠা, খাফনা পিঠা, পাতা পিঠা ইত্যাদি। এসব পিঠার বেশির ভাগই হয়তো কখনো চোখে দেখা হয়নি শহুরে মানুষের। তাই পিঠার স্টলগুলোয় ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। কেউ পিঠার স্বাদ পরখ করছে, কেউ বাসার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ছিল ফটোসেশন। হরেক নামের পিঠার ছবি অনেকেই করেছেন নিজের মুঠোফোনে বন্দি।

সিলেট নগরের জেল রোড থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পারিসা ফারিয়া বলেন, ‘বাসায় অনেক জাতের পিঠা তৈরি হয়, কিন্তু গ্রামীণ পিঠার কোনো তুলনা হয় না। গ্রামে দাদুবাড়ি গেলে অনেক রকম পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়। কিন্তু শহরে এসব পিঠা পাওয়া যায় না। উৎসবে না এলে এত পিঠার সঙ্গে পরিচয়ই হতো না। বাহারি নামের অনেক পিঠার স্বাদ নিয়েছি। কয়েক জাতের পিঠা বাসার জন্যও নিয়ে যাচ্ছি। এ রকম উৎসব আমাদের শিকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি শামসুল আলম সেলিম বলেন, ‘পিঠা আমাদের চিরায়ত গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু দিন দিন এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ অনেক পিঠার সঙ্গে আমাদের নতুন প্রজন্ম পরিচিতই নয়। এ রকম উৎসব আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাংলার চিরায়ত উৎসব ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সাহায্য করে। তাদের সৃজনশীল করে তোলে।’

পিঠা প্রদর্শনী ও বিক্রয় ছাড়াও উৎসবে দিনভর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। গান, নাচ, কবিতায় মুখরিত ছিল উৎসব।

উৎসবের আয়োজক শ্রুতির সদস্যসচিব সুমন্ত গুপ্ত জানান, ‘বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছর পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ বছর ছিল শ্রুতির ২১তম পিঠা উৎসব। প্রতিবারই এ উৎসবে নগরের সব বয়সী মানুষ অংশ নেয়। উৎসবে অংশ নিয়ে তারা এক দিনের জন্য হলেও শিকড়ে ফিরে যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর