মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঋণের চাপ কমানোর পরিকল্পনা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক ঋণের চাপ কমাতে হলে নিজেদের আয় বাড়াতে হবে একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

মানিক মুনতাসির

ঋণের চাপ কমানোর পরিকল্পনা

আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের চাপ কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এমনিতেই ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণসুবিধা সীমিত হয়ে আসবে বাংলাদেশের। আসন্ন ওই পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক বছর আগে থেকেই সেই প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদ দিয়ে আসছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (্আইএমএফ)। সম্প্রতি বাংলাদেশের অনুকূলে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ, যার প্রথম কিস্তি ছাড়ও করা হয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে নিজেদের অর্থায়নে, যা দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আসছে বাজেটে বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। আসছে বাজেটে এটাকে কমিয়ে আনার কৌশল নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সে সময় বাজেট ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪  কোটি টাকা। এই ঘাটতি এখন আরও বেড়েছে। বাজেট ঘাটতি বেড়ে গেলে তা কমিয়ে আনতে সরকার দুই ধরনের উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে, যার একটি বৈদেশিক উৎস ও অন্যটি অভ্যন্তরীণ উৎস। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ করলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বৈদেশিক উৎসের দিকে ঝোঁক বেশি থাকে। এদিকে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব আদায়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে মধ্যমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়ন, করনীতি পরিপালনের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন এবং রাজস্ব জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে কর অব্যাহতি কমিয়ে আনতে হবে। জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, মধ্যমেয়াদি রাজস্ব কৌশল বাস্তবায়ন, কর-সংক্রান্ত নিয়মকানুন প্রতিপালনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে, খেলাপি ঋণ কমাতে হবে এবং মূলধন ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করবে, ২০২৬ সালের মধ্যে কর অব্যাহতি কমিয়ে আনতে হবে, জিডিপির দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তি কর আহরণ করতে হবে। ফলে রাজস্ব আদায় বাড়লে বাজেট ঘাটতিও কমে আসবে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি এবং ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। ধাপে ধাপে আরও বাড়ানো হবে। এতে জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমে আসবে। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। ফলে সরকারকে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে কম। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার তার রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম চালাতে ঋণ নেবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তার একটা সহনীয় মাত্রা রয়েছে। মাত্রা অতিক্রম করলে ঝুঁকি, যা দেশকে দেউলিয়া পর্যন্ত করে ফেলে। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো। তবে আমাদের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাজেট ঘাটতি কম হতো।’ তাহলে বৈদেশিক ঋণ এমনিতেই কমে আসত বলে তিনি মনে করেন। সরকার যদি সে পরিকল্পনা করে থাকে তবে তা হতে হবে খুবই সুষ্ঠু এবং শক্তিশালী আর তা বাস্তবায়ন করতে হবে শক্ত হাতে। এ জন্য করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে বিকল্প আরেকটা আছে, সেটা হলো বৈদেশিক মুদ্রার সদ্ব্যবহার করা।

এদিকে বর্তমানে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সবমিলিয়ে বাংলাদেশের কাছে ৭ হাজার ২২৯ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই পরিমাণ অর্থ বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ঋণ আছে।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের পরের স্থানে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির কাছে ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। এরপর আছে যথাক্রমে জাপান, রাশিয়া ও চীন।

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু জাপানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৯২৩ কোটি ডলার। এ ছাড়া রাশিয়া ও চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০৯ কোটি ডলার ও ৪৭৬ কোটি ডলার। আইএমএফের কাছে ঋণের পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার। নতুন করে সংস্থাটির কাছ থেকে আরও ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে সম্প্রতি চীন ও রাশিয়ার কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর