মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ২৭৬৬ জন মানুষের জন্য গড়ে মাত্র একটি শয্যা!

সরকারি হাসপাতাল চিত্র

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ৯২ লাখ। আর জেলা ও উপজেলা মিলে সরকারি হাসপাতালগুলোয় মোট শয্যা আছে ৩ হাজার  ৩২৫টি। এ হিসাবে চট্টগ্রামের ২ হাজার ৭৬৬ জন মানুষের চিকিৎসার জন্য শয্যা আছে মাত্র একটি। জনসংখ্যার তুলনায় শয্যা কম হওয়ায় রোগীদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। উপজেলা হাসপাতালে অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে রোগী কমে গেলেও জেলার হাসপাতালে প্রতিনিয়তই রোগীর চাপ বেশি। ফলে শয্যার বাইরে দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত রোগী ভর্তি রাখতে হয়। হাসপাতালের বারান্দা, ফ্লোর ও মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের।     

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে কমপক্ষে ৩.৫টি শয্যা থাকা উচিত। বর্তমানে দেশের ১ হাজার মানুষের বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে একটিরও কম করে শয্যা আছে। তবে সরকার দেশের প্রধান আটটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজার শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অনুমোদিত শয্যা আছে ১ হাজার ৩১৩টি। তবে সর্বশেষ গত বছর হাসপাতালটিকে ২  হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনো জনবল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। হাসপাতালটি চলছে ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অনুমোদিত শয্যা আছে ২৫০টি। তবে এটিও চলছে ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে। বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) আছে ১২০টি শয্যা। তাছাড়া, ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আছে মোট ৭৫৫টি শয্যা।

জেনারেল হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করে কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জোর দাবি থাকলেও তা হচ্ছে না। সাত বছর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলেও এখনো সেখানে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। 

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা পাঁচটি দশক পার করল, অথচ চট্টগ্রামে একটিও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়নি। সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংকটও প্রকট। এটি যেমন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা, তেমনি পরিকল্পনারও অভাব। আমাদের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নে যখন যা চাওয়া হয়েছে, তখন তা দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি যথাযথ জায়গায় সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে চট্টগ্রামে হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি, শিশু, নিউরোসার্জারি, নিউরোমেডিসিন, গাইনিসহ জরুরি রোগের চিকিৎসায় ঢাকায় দৌঁড়াতে হয়। কয়েক বছর আগে আমরা বিষয়টি নিয়ে একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এটি চট্টগ্রাম বিদ্বেষীদের রোষানলে পড়ে থমকে আছে।      

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সুমন বড়ুয়া বলেন, সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি একটা চলমান প্রক্রিয়া। জনসংখ্যা বাড়ছে, সঙ্গে শয্যাও বাড়ানো হচ্ছে। যেমন চমেক হাসপাতালে সম্প্রতি ১৩১৩ শয্যা থেকে ২২০০ শয্যা এবং উপজেলায় ৩০ শয্যার হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে সরকারি হাসপাতালে শয্যা অপ্রতুল। তবুও কেউ চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে না। এটাই বড় কথা।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শামীম হাসান বলেন, ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার রোগীর সেবা দিতে হচ্ছে। কোনো রোগীকে ফেরত পাঠানো হয় না। এত কম জনবল দিয়ে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা দেওয়াটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। হাসপাতাল এখন ২২০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি। এখানে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও স্বাস্থ্য সহকারীর ঘাটতি বেশি। তবে জনবল নিয়ে একটা নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হচ্ছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর