হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্রস্থ নেতারা সোমবার নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ৫২ জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে কয়েক শ হামলা হয়েছে। লুটতরাজের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে। আমরা এ পরিস্থিতির অবসান চাই, দায়ীদের বিচার চাই। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য। প্রশ্নের জবাব দেন সভাপতি নবেন্দু দত্ত, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শিতাংশু গুহ ও ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ড. দীলিপ নাথ, সহসভাপতি পার্থ তালুকদার, সদস্যসচিব চন্দন সেনগুপ্ত, সুকান্ত দাস টুটুল, আশীষ ভৌমিক, ভজন সরকার, সুশীল সিনহা প্রমুখ।
ঐক্য পরিষদ নেতারা বলেন, নব্বইয়ের পট পরিবর্তনের পর আশা করা হয়েছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ হবে কিংবা কোনো ধরনের হামলা হলেও দায়ীরা সমুচিত শাস্তি পাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো হামলারই বিচার হয়নি। এমনকি চিহ্নিতরা গ্রেপ্তারের আওতায়ও আসেনি। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ বেয়ে সরকার উৎখাতের পর একই ধরনের পরিস্থিতির অসহায় ভিকটিম হচ্ছে সংখ্যালঘুরা। তাহলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সুফল আসবে কবে? ৫ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু নাগরিকদের ওপর যে নিরন্তর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চলছে তা বন্ধে আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারকে অনুরোধ জানাই। কয়েক যুগ ধরে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী, কট্টর মৌলবাদী ও উগ্রপন্থিরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে তাদের সবকিছু লুটপাট করে, দেবদেবীর মূর্তিসহ উপাসনালয় গুঁড়িয়ে দিয়ে, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে, শারীরিক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি করে, ভুয়া ফেসবুক আইডি করে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে, নিরপরাধ সংখ্যালঘু নাগরিকদের ওপর ব্লাসফেমির মিথ্যা অভিযোগ এনে দেশত্যাগে বাধ্য করে এসেছে। রামু, নাসিরনগর বা ২০২১ সালে পুজোর সময় দেশের ২২ জেলায় তারা সংখ্যালঘুদের ওপর যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল এর সবই আপনারা জানেন। সে ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট আরেক দফা সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হয়েছে, যার বিবরণ ও হিসাব দেশবিদেশের সংবাদপত্রে এসেছে। কত ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক হিসাব তো পাওয়া সম্ভব নয়, তবে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য থেকে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ৫২ জেলায় ২০৫টি নির্যাতন ঘটেছে। দেশে ১৯৭১ সালের মতোই মৃত্যুভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে আমাদের আত্মীয়স্বজন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বর্বর অত্যাচারীরা একটা চিহ্নিত ধর্মীয় সন্ত্রাসী রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যারা ১৯৪৬-এ নোয়াখালীতে হিন্দু ম্যাসাকার করেছে, ১৯৭১ সালে গণহত্যায় শুধু সংখ্যালঘুদের নয় আপনাদের মতো প্রগতিশীল মুসলমানদেরও ধর্ষণ-হত্যা করেছে, ১৯৯২ সালের লোগাঙে আদিবাসীদের ম্যাসাকার করেছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর, তারপর সাম্প্রতিককালে রামু, নাসিরনগর, বোরহানউদ্দিন, সাঁথিয়াসহ সারা দেশে কয়েক ডজন বড় আকারের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস করেছে। বর্তমানে দেশে এ বর্বর শক্তি যে সংখ্যালঘু নির্যাতন চালাচ্ছে ঐক্য পরিষদ এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছে। দেরিতে হলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা দুজনই এসব নির্যাতনের নিন্দা করেছেন এবং সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা তাতে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি।
লস অ্যাঞ্জেলেসে বিশাল বিক্ষোভ : সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিপুল লোকসমাগমে বিক্ষোভ হয়েছে। ১১ আগস্ট বিকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিএনএন ভবনের সামনে এ বিক্ষোভ হয়। গ্রেটার ক্যালিফোর্নিয়া হিন্দু কমিউনিটি আয়োজিত এ বিক্ষোভে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ, এমনকি ছোট শিশুরা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লায়ার, ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়। ৯৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা অবজ্ঞা করে সিএনএন ভবনের সামনে বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে।