বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণ এবং সর্বশেষ চাঁদপুর শহরে তৃতীয় জানাজা শেষে জেলা সদরের গোবিন্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও জানাজায় অংশ নেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জানাজা শেষে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর প্রতি শেষশ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমীন গাজীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। জানাজায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপি ও পেশাজীবী নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, বিএনপি নেতা মীর শরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, জামায়াত মুজিবুর রহমান, শামসুল ইসলাম, আবদুল হালিম, নূরুল ইসলাম বুলবুল, সেলিম উদ্দিন, মোবারক হোসাইন, আবদুর রব, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমানসহ বিভিন্ন দল ও পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজার আগে তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজী দেশের অঙ্গনে একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সব সময় দেশের পক্ষে কথা বলেছেন। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি গণমাধ্যমের জন্য সব সময় লড়াই করেছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তিনি কারানির্যাতিত ছিলেন। আমরা গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদমুক্ত করব।’ এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের জানাজায় আরও অংশ নেন সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, প্রেস ক্লাব সভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, রাশেদুল হক, সাংবাদিক নেতা আবুল কালাম আজাদ, মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাইফুল আলম, এম এ আজিজ, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদুল হাই সিদ্দিকী, এম আবদুল্লাহ, মনজুরুল ইসলাম, বাকের হোসাইন, নুরুদ্দিন নুরু, ইলিয়াস খান, কে এম মহসিন, মুরসালিন নোমানী, সদরুল হাসান, শফিউল আলম দোলন, সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, রফিকুল ইসলাম আজাদ, ইলিয়াস হোসেন, কাজী রওনুকুল হোসেন, শাহেদ চৌধুরী, সাহাবুদ্দিন চৌধুরী, শামসুদ্দিন দিদার, বিএফইউজের ওবায়দুর রহমান শাহিন, বাছির জামাল প্রমুখ।
এরপর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রাঙ্গণে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদরে এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে মারা যান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, উচ্চ ডায়াবেটিস, ব্যাক পেইন, লবণ ঘাটতিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
১৯৫৩ সালের ২২ এপ্রিল রুহুল আমিন গাজীর জন্ম চাঁদপুরের গোবিন্দিয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ১৯৭৪ সালে রিপোর্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক ইত্তেফাকে। ইত্তেফাক ছেড়ে যোগ দেন দৈনিক সংগ্রামে। সেখানে বিশেষ প্রতিনিধি, চিফ রিপোর্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিক-সংবাদকর্মীদের রুটিরুজির আন্দোলনে রুহুল আমিন গাজী ছিলেন সব সময় সোচ্চার। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ সাংবাদিক নেতাকে কারাবন্দি করে রাখে দেড় বছরের বেশি। কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে জামিন দেয়নি সরকার। বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন রুহুল আমিন গাজী।
চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের জামালখানে প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিএমইউজে) উদ্যোগে গায়েবানা জানাজাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচি, প্রবীণ সাংবাদিক ইস্কান্দার আলী চৌধুরী, সিএমইউজের সাবেক সভাপতি শামসুল হক হায়দরী, সিএমইউজে সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ ও সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রবীণ আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-অ্যাবের চট্টগ্রাম সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ।