স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী টিবি গেটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবনে এ ঘটনা ঘটে। পরে হামলার বিচার চেয়ে অধিদপ্তরে মিছিল ও সমাবেশ করেন এনডিএফ ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকরা।
প্রত্যক্ষদর্শী, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অধিদপ্তরের সামনের সিঁড়িতে অবস্থান নেন এনডিএফের চিকিৎসকরা। সকাল ১০টার দিকে অধিদপ্তরে আসেন ড্যাবের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও টেকনোলজিস্টরা। তাদের পেছনে রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকজন বহিরাগত ছিলেন। ড্যাবের চিকিৎসকেরা এনডিএফের চিকিৎসকদের জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এর মধ্যেই বহিরাগতরা ৬ থেকে ৭ জন এনডিএফের কয়েকজন চিকিৎসকের ওপর হামলা করেন।
এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ইমরানসহ অন্তত তিনজন আহত হন। এর মধ্যে ডা. ইমরানের বুকের একটি হাড় ভেঙে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তার মাথা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
হামলার প্রতিবাদে পরে অধিদপ্তরের বিভিন্ন ফ্লোরে বিক্ষোভ মিছিল করেন এনডিএফ ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকেরা। এ সময় ‘বহিরাগত দিয়ে চিকিৎসকের ওপর হামলা কেন, বিচার চাই বিচার চাই’সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
চিকিৎসকেরা বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ড্যাবের একটি অংশ বহিরাগতদের নিয়ে হামলা চালায়। তাও আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো জায়গায়। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এনডিএফের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার ফোকাল পারসন ডা. আবদুল কাদির নোমান বলেন, ‘আমাদের ওপর কেন হামলা হলো? আমরা বিশ্বাস করি হামলাকারীরা কোনো চিকিৎসক নন। ড্যাবের একটা অংশ বহিরাগতদের ভাড়া করে এনে হামলা করেছেন। হামলার ভিডিও ফুটেজ আছে, অধিদপ্তরের সিসি টিভি ফুটেজ আছে। অধিদপ্তরের প্রশাসকদের হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’
তবে এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ড্যাবের নেতারা। তারা বলেন, ‘এনডিএফের কয়েকজন শুরুতে আমাদের লোকদের গায়ে হাত উঠায়। এরপরই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কেউ সামান্য আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। কাউকে মারধর করা হয়নি।’
ড্যাবের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার সভাপতি ডা. ফারুক হোসেন বলেন, ‘কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বহিরাগতদের আনা তো দূরের কথা, উল্টো আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির জায়গা ওনারা দখল করেন। এমনকি আমাদের টাঙানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তারপরও আমরা কিছু বলিনি। বরং মহাপরিচালক আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করার কথা বলেছেন, আমরা করেছি। কিন্তু তারা (এনডিএফ) এখনো অধিদপ্তরে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই স্বচ্ছ ব্যক্তিদের অধিদপ্তরে প্রশাসনে বসানো হোক। অতীতে স্বৈরাচার সরকারের তোষামোদি করেছে, নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে এমন ব্যক্তিকে বসতে দেওয়া হবে না। সরকার দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে বলে আমরা আশা রাখছি।’