প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দেশের মানুষ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করছে। এখন মানুষ মন খুলে লিখছে, সমালোচনা করছে, গালিও দিচ্ছে। কাউকে কিছু বলা হচ্ছে না। অনেকে আবার বলছে, স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতি সফট হচ্ছি। কিন্তু আমরা তো আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না। আমরা কোনো কলম ভেঙে দিইনি, কোনো প্রেসে তালা দিইনি। কোনো গণমাধ্যম যদি তার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে, আপনারা সেই গণমাধ্যম অফিসের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করুন। সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, আপনারা লিখুন, মন খুলে লিখুন।’
গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশ : গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচি। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জাতিসংঘ জুলাই গণহত্যা নিয়ে একটি চমৎকার প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী কে কোথায়, কী ভূমিকা রেখেছিল- সেগুলো উল্লেখ করা আছে। এরকম একটি প্রতিবেদন যেন সাংবাদিকতা নিয়ে করা হয়, সে বিষয় জাতিসংঘের সহায়তার জন্য লিখব। জাতিসংঘকে অনুরোধ করা হবে বিশেষজ্ঞ একটি প্যানেল করে গত ১৫ বছরের সাংবাদিকদের ভূমিকা কেমন ছিল- তা অনুসন্ধান করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে। বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারত থেকে যখন দেশে ফিরেছিলেন তখন সংবাদ সম্মেলনে যা ঘটেছিল- তা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম দালালি। এর চেয়ে নিকৃষ্টতম দলদাসগিরি আর হতে পারে না। প্রশ্ন করার কথা ছিল যেসব চুক্তি হয়েছে তা নিয়ে।
কিন্তু আমরা দেখলাম বলা হচ্ছে হাসিনা আন্তর্জাতিক নেত্রী। তার নোবেল পাওয়া উচিত। ভবিষ্যতে কেউ যাতে গণমাধ্যমকে এমন নিচু স্তরে নামাতে না পারে- তার ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আংশিক সত্য কখনো সাংবাদিকতা নয়। পুরোপুরি সত্যটাই সংবাদ, সাংবাদিকতা। সঠিক তথ্যেই সাংবাদিকতা করতে হবে। সাংবাদিকতা রোধে ৩২টি আইন আছে। কিন্তু সাংবাদিক সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সিএমইউজেসেক্রেটারি সালেহ নোমান ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, পিপলস ভিউ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ডা. খুরশীদ জামিল, অ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম সেলিম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য নীলা আফরোজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রিজোয়ান সিদ্দিকী, চৌধুরী সিয়াম এলাহী প্রমুখ। এ সভায় ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দীন কাদেরী শওকত, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া, আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি হাসান আলী, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুকসহ চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।