দিগন্তজুড়ে বোরো ধান খেত। যেখানে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। শীষে কলাপাকা রংও ধরেছে। জ্যৈষ্ঠে ভ্যাপসা গরমে মাথার ওপরে মেঘ-বৃষ্টি নিয়ে বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন করছেন চাষি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে বাগড়া দিয়েছে প্রকৃতি। হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি গেল পাঁচ দিনের ১৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় জমিতে পড়েছে বোরো ধান। আর নিচু জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এমন অবস্থায় ধান কাটতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগায় বেকায়দায় পড়েছে বোরো চাষিরা। যদিও প্রায় অর্ধেক জমির ধান ইতোমধ্যেই কেটেছেন শ্রমিকরা। কিন্তু বাকি ধান তোলা নিয়েই হচ্ছে সমস্যা। কৃষি অফিস বলছে, এ বছর রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে ধানের। চাষিরা জমি থেকে ধান মাড়াইয়ের পরে দুই দিন রোদে শুকিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার রাজশাহীতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার আগের দিন হয়েছে ৩১ দশমিক ৮ মিলিমিটার ও তার আগের বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া গত রবিবার ২৫ মিলিমিটার ও গতকাল ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতের সময় রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝোড়ো হাওয়া। এতে করে অনেক কৃষকের বোরো ধান জমিতে পড়ে গেছে। পবা উপজেলার পরিলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার বোরো চাষি সাজ্জাদ হোসেন। তার এ বছর ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান আছে। এর মধ্যে ২৮ জাতের ধান আছে ১ বিঘা ও ২৯ জাতের ধান আছে ২ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, ২৮ জাতের ধান ও ধানের গাছে কলাপাকা রং ধরেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে ঘরে তুলতে হবে। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। এখন বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে পানি শুকাতে তিন-চার দিন সময় প্রয়োজন। না হলে ধানের খড় পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লোকসান হবে। তিনি বলেন, এই বোরো ধানে সেচ ও সার খরচ বেশি। তাই ধানের খড় বিক্রি করে পুষিয়ে নেন চাষিরা।
নগরীর বুধপাড়ায় তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। এর মধ্যে চার কাঠা জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করেন তিনি। ২৮ জাতের ধানগুলো এক সপ্তাহ আগে কাটা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে জমি থেকে ধান তোলা সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থায় জমিতে পানি জমে গেছে। আর অন্য ধানগুলো বাতাসে জমিতে পড়ে গেছে।
একই এলাকার আরেক কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্গাপুর উপজেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে চার বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ৫৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে কাজের মজুরি। জমিতে পড়ে যাওয়া ধান কাটতে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে। আরও এক বিঘা জমির ধান কাটতে বাকি আছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে ধান পড়ে গেছে। তবে চাষিরা দ্রুত সময়ে কেটে ফেললে লোকসান হবে না।’