ঈদযাত্রায় টার্মিনালগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষণীয়। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে ঈদযাত্রায় সড়ক পথে কিছুটা ভোগান্তি রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-আশুলিয়া ও ঢাকা-গাজীপুর সড়কে পরিবহনের চাপ বেড়েছে। আর শিডিউল বিপর্যয় রয়েছে ট্রেনে। ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব করায় ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। তবে লঞ্চঘাটে নেই যাত্রীদের চাপ। সবমিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রায় স্বস্তি এবং ভোগান্তি উভয়ই রয়েছে।
সড়কপথে ভোগান্তি : ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ। উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলার মানুষ চন্দ্রা দিয়ে যাতায়াত করে। ফলে প্রতি বছর চন্দ্রার ত্রিমোড় এলাকায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। তবে যানজট নিরসনে মহাসড়কে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। অন্যদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে চন্দ্রা এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
শিডিউল বিপর্যয় ট্রেনে : ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভিড় বাড়লেও দুটি ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরা। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে তিতাস কমিউটার ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর ছেড়ে যায় ট্রেনটি। জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পর।
নৌপথে স্বস্তি : বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও আগের মতো যাত্রী চাপ নেই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বদলে গেছে চিরচেনা ঈদযাত্রার দৃশ্যপট। আগের মতো ভিড় নেই লঞ্চ কাউন্টারগুলোতে, বরং অনেকটাই সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। মালিক-শ্রমিক এবং যাত্রীদের ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা : ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী এবং পথচারীদের জন্য এক গুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ডিএমপি কমিশনার স্বাক্ষরিত এই নির্দেশনায় জরুরি প্রয়োজনে টার্মিনালের পুলিশ কন্ট্রোলরুম বা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের উদ্দেশে ১৪ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাসযাত্রার শিডিউল অনুযায়ী টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়তে হবে। যাত্রীদের নিকট থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করা যাবে না। একই সিট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রয় করা যাবে না। সিট ব্যতীত বাসের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। পণ্য ও পশুবাহী যানবাহনে বিশেষ করে ফিরতি যানবাহনে যাত্রী বহন করা যাবে না। গতিসীমা মেনে গাড়ি চালাতে হবে, বেপরোয়া ও অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। ওভারটেকিং নিষিদ্ধ এলাকা, রাস্তার বাঁক ও সরু ব্রিজে ওভারটেকিং করা যাবে না। নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে, ঘুমঘুম ভাব হলে ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হালনাগাদ কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে না। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন বা এয়ারফোন ব্যবহার করা যাবে না এবং গাড়িতে উচ্চৈঃস্বরে গান বাজানো যাবে না। উল্টো রাস্তায় গাড়ি চালানো যাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা যাচাই করে গাড়িচালক নিয়োগ করতে হবে। চালককে একটানা পাঁচ ঘণ্টা ও দিনে আট ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে বাধ্য করা যাবে না।
যাত্রীদের উদ্দেশে ছয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সড়কের যত্রতত্র দাঁড়িয়ে বাসে না উঠে নির্দিষ্ট টার্মিনাল/কাউন্টারে গিয়ে বাসে উঠতে হবে। অপরিচিত কারও দেওয়া কোনো খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা যাবে না। মালামাল নিজ হেফাজতে/দায়িত্বে রাখতে হবে। বাসযাত্রার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাউন্টার/টার্মিনালে হাজির হতে হবে। রাস্তা পারাপারে ফুট ওভারব্রিজ/ আন্ডারপাস/জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করতে হবে। চলন্ত গাড়িতে ওঠানামা করা এবং পণ্যবাহী/পশুবাহী মোটরযানে যাত্রী হয়ে যাতায়াত করা যাবে না। পথচারীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, জেব্রা ক্রসিং, ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হবে। দৌড়ে বা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পারাপার হওয়া যাবে না। ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে হবে।