সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় শিল্পকলায় চলছে মনসুন রেভ্যুলেশন স্পিরিটকে উপজীব্য করে ৯ দিনের ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব ২০২৫’।
গতকাল উৎসবের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’।
দীপক সুমনের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটি পরিবেশন করে তীরন্দাজ রেপার্টরি’। জুলাই! এক দুঃসহ সময়ে গোটা জাতিকে একত্রিত করেছিল। আবু সাঈদের প্রসারিত দুই হাত থেকে অজপাড়াগাঁয়ের হৃদয় তরুয়ার শহীদি মৃত্যু নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে দেশের মানুষকে। স্বৈরাচারের বিশাল পাথর বাঙালির ঘাড় থেকে নামাতে পেরেছে। সে রকমই এক জীবনের নাটকের চরিত্র শুভঙ্কর। সেও এই একই ভোগবাদী সমাজের স্বপ্ন ও বাস্তবতার বিস্তর ফারাক নিয়ে বড় হয়ে ওঠা একজন নতজানু নাগরিক। যে জীবনের বেশির ভাগ জুড়েই আছে সয়ে যাওয়ার ইতিহাস, আছে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। সেই জীবন শুভঙ্কর ও তার পিতা-মাতাকে হতাশ কওে তাদের স্বপ্ন থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে। তবুও শুভঙ্কর স্বপ্ন দেখতো এক বৈষম্যবিহীন সময়ের। সে অনুভব করতো সেই সময় নির্মাণ এমনি এমনি হয় না- তার জন্য লড়াইটাও করতে হয়। সময়ের প্রয়োজন যখন উপস্থিত হয়, শুভঙ্কর ঠিকই হাজির হয় রাজপথে। অনেক না পাওয়ার গ্লানি ও অসংখ্য আকাক্সক্ষার জমিনে দাঁড়িয়ে শুভঙ্কর অন্যদের মতোই স্বৈরাচারের গুলির সামনে স্লোগানে কণ্ঠে জোর লাগায় এবং যুদ্ধের চিরাচরিত নিয়ম সম্ভবত এই যে, কেউ পুড়ে যায় বলেই কেউ আলো পায়। আর সেই নিয়মেই সম্ভবত ভিড়ের ভিতর শুভঙ্কর হয়তোবা হারিয়ে যায় অথবা হয়তো হারিয়ে ফেলি শুভঙ্করকে। তবুও কেউ কেউ থাকে, যারা বিস্মৃত হয় না- যারা স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে জীবন্ত রাখে শুভঙ্করদের। তেমনি এক স্মৃতি নিয়ে এই নাটক।
বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিলয় কুমার বিশ্বাস, সারাহ মীম, সাগর মৈত্রী, ফারজানা মেহেজাবীন, কৌশিক আহমেদ, মাহিমা সাদিক লিমা, সাদিয়া শাহীন অন্তু, মানসিফ তাজরিয়ান, বাপ্পি হায়দার, সোনালি কবির, মো. আবদুল্লাহ আল নোমান, মো. সাজাওয়ার হোসেন অরণ্য, সানজিদ ইসলাম তূর্য, সামিয়া চৌধুরী, আল ওয়ালীদ জিয়ান, বাপ্পী হায়দার, দীপক সুমন।
একই সময়ে জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটক ‘দেয়াল জানে সব’।
শাকিল আহমেদ সনেটের রচনা ও নির্দেশনায় এই নাটকটি পরিবেশন করে স্পন্দন থিয়েটার সার্কেল।
বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিতাদিত্য বড়ুয়া, জয়ন্ত ত্রিপুরা, আকাশ মিয়া, নুসরাত জাহান, কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ, নারিন আফরোজ লিনসা, রাহুল, মো. সবুজ, আলিফ মাহমুদ, মেজবা মাহবুব রাফিল, সিয়াম শুভ, আসিফ হোসেন, সয়েম, ফাহাদ প্রমুখ।
এই উৎসবে মঞ্চায়ন হচ্ছে দেশের ১১টি খ্যাতনামা নাট্যদলের ১১টি নাটক। প্রত্যেকটি নাটক নির্মিত হয়েছে ২০২৪ সালের আন্দোলন ও সমকালীন সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। ৮ আগস্ট শেষ হবে ৯ দিনের এই নাট্যোৎসব।