হাতে প্রিয়জনের ছবি, চোখে অশ্রু। একটাই দাবি, ‘বিচার চাই, খোঁজ চাই’। দুপুরের প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘মায়ের ডাক’ এর ব্যানারে তারা এ মানববন্ধন করেন।
স্বজনরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন। এ সময় তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে। অনেকে স্বজনদের ছবি বুকে চেপে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, বছরের পর বছর কেটে গেল, কোনো খোঁজ পাই না। শুধু অপেক্ষা আর প্রতিশ্রুতি শুনি। মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, গুমের শিকার পরিবারগুলোর আওয়াজ আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছাচ্ছে, কিন্তু দেশের সরকারের কাছে যাচ্ছে না। সরকারে এখনো অপশক্তি রয়ে গেছে। সব তথ্য জানাতে এখনো বাধা দেওয়া হচ্ছে। গুম কমিশন হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল হয়েছে। তারা গুমের মাত্র দুটি অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে। কিন্তু তাদের সেনানিবাসে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। এ সময়ে এসে রাস্তায় বিচারের জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে। তাঁরা সবার খোঁজ চান।
মানববন্ধনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, অনেক দিন থেকেই গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছে, কিন্তু এখানো আমরা কোনো বিচার পাইনি। এক ভুক্তভোগী বলেন, একজন খুনি তো খুনিই, তিনি সেনাবাহিনীর কেউ হোক বা প্রধানমন্ত্রী হোক। তার বিচার হতেই হবে। সরকার যদি খুনের বিচার না করে তাহলে আমরা কার কাছে যাব। গুমের শিকার খালেদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা শারমিন সুলতানা বলেন, এক যুগ ধরে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে গেলাম। গুম কমিশন হলো। কিন্তু তারা আমাদের কোনো খবর দেয় না। আমি চাই না আমার সন্তান এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে তার বাবার খোঁজ চাইবে। এই বিচার প্রহসনের। এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের আলাদা করে রাখা হচ্ছে। বৈষম্য থেকেই গেল।
গুমের শিকার কাজী ফরহাদের স্বজন আমানুল হক আমান বলেন, স্বাধীন হওয়ার পরও বিচারের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। স্বজনরা সংখ্যা জানতে চান না। গুম কমিশন শুধু আয়নাঘর আর যারা ফিরে এসেছেন, তাদের কথা বলছে। কিন্তু যারা ফিরে আসেনি, তাদের কথা বলে না।