নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা আপাতত নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী নন। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবিরই থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। শ্রম আইন ও শ্রমিক সংগঠন গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, নির্বাচিত সরকার গঠন ছাড়া দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না। নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী নন। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির থাকবে।
গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তাঁরা। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘বিজনেস ক্লাইমেট : রিফর্মস, অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অ্যাহেড’ । এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ।
সেমিনারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যই প্রমাণ করে, বেসরকারি বিনিয়োগ স্পষ্টভাবে ধীর হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে সক্ষম একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ থাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিটিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু সংস্কার এনেছে, কিন্তু সেগুলোর প্রভাব এখনো দৃশ্যমান নয়। এখন নতুন নীতিমালা দেওয়ার সময় নয় বরং নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে বৈধতার সঙ্গে সংস্কার কাজ তোলা জরুরি।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল প্রশ্ন তোলেন, ‘যে দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগুন নেভানোর সরঞ্জাম পর্যন্ত নেই, নীতিতে স্থিতিশীলতা নেই, জ্বালানি সংকট চলছে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে কীভাবে? বিদেশি বিনিয়োগের পেছনে ছোটা বাদ দিয়ে সরকারকে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেওয়াতেই মনোযোগী হতে হবে। তারাই রাজস্ব দেয়, কর্মসংস্থান তৈরি করে।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, টার্নওভার ট্যাক্স নীতিটি ব্যবসাবান্ধব নয়। প্রথমে এটিকে সমন্বয়যোগ্য বলা হলেও পরে তা আয়কর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, লাভ-ক্ষতির তোয়াক্কা না করেই। এমনকি এনবিআর চেয়ারম্যানও বলেছেন, এটি ব্যবসার অনুকূল নয়, কিন্তু তিনি নিজেই পরিবর্তন করতে পারেননি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যবসা সহজ করার পরিবেশ ৯৯ শতাংশ খারাপ ছিল। এখন সেটা হয়তো ৯৫ শতাংশে এসেছে। ধীরে ধীরে এটা ৯০ শতাংশ হবে এবং আরও উন্নতি হবে। কেন এটা হয় না, সেটা নিয়ে আলোচনা দরকার। বর্তমান সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করেছে। এতে দুই মাসে প্রায় ১২ লাখ সরাসরি সাক্ষাৎ কমেছে। অর্থাৎ ১২ লাখ বার এনবিআরে কাগজ নিয়ে আসতে হয়নি।’ বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছে বলে জানান তিনি।