ডেঙ্গুজ্বরের জন্য দায়ী ভাইরাস নিয়ে দেড় বছর গবেষণা চালিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত মানবদেহের ৯টি জিন খুঁজে পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়টি জিন সরাসরি সংক্রমণ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি ওষুধ নির্ধারণ করেছেন তিনি। ওই শিক্ষার্থীর গবেষণাটি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই গবেষণা ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসার জন্য এক নতুন দুয়ার খুলতে পারে। তারা বলছেন, সরকারি উদ্যোগে ডেটাবেজ তৈরির মাধ্যমে এই গবেষণায় ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ভাইরাসটি এখনো পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের জন্য এক চ্যালেঞ্জ। ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুর আধিক্য দেখেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল লতিফ এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। দেড় বছরের গবেষণায় ডেঙ্গুর ৯টি নতুন জিন আবিষ্কার ও তিনটি ওষুধ নির্ধারণ করেছেন তিনি। আবদুল লতিফ বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি কাজটি শুরু করেন। এ বছরের ৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘প্লস ওয়ানে’ ফলাফলসহ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। গবেষণায় ইন-সিলিকো বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা মানবদেহের ৯টি জিন শনাক্ত করেছেন যেগুলো ডেঙ্গুর সংক্রমণ, কোষচক্রের ব্যাঘাত ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। গবেষণায় তিনটি ওষুধ শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলো ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। গবেষক আবদুল লতিফ বলেন, এ তথ্যগুলো ব্যবহার করে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কার্যকর পদ্ধতি তৈরি সম্ভব। তাই ড্রাই ল্যাব থেকে ওয়েট ল্যাবের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আরও গবেষণার জন অর্থ সঙ্কুলানও দরকার।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাদিক বলেন, এই অনুসন্ধানগুলো সম্মিলিতভাবে পরবর্তী ধাপে যদি এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের মতো জায়গা থেকেও ডেঙ্গুর প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, এই গবেষণায় পাওয়া সফলতার ধারাবাহিকতায় অধিকতর গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল হক মোল্লা বলেন, এই গবেষণা ডেঙ্গু চিকিৎসায় একটি মাইলফলক হতে পারে। তবে এর আওতায় ডেটাবেজ তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।