ভূমিকম্প হলে এর ধাক্কা লাগে সিলেটের প্রশাসনে। কয়েক দিন নড়েচড়ে বসে নিরাপত্তা নিয়ে। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি থামলে থেমে যায় প্রশাসনের দৌড়ঝাঁপও। এবার ঢাকায় বড় ভূমিকম্পের পর ফের ঝাঁকুনি লেগেছে সিলেটের প্রশাসনে। নগরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২৩টি বহুতল ভবন ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ভবনগুলো ভাঙার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। অথচ এ ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও বছরের পর বছর ‘মৃত্যু আতঙ্ক’ হিসেবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নগরে। এর মধ্যে সরকারি ও সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ভবনও রয়েছে।
২০২১ সালের মে মাসে ১০ দিনের মধ্যে ২০টি ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর বেশ তৎপর হয়ে ওঠেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। তালিকা করা হয় ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের। এর মধ্যে বেশির ভাগই বহুতল বাণিজ্যিক স্থাপনা। ওই সময় নগরের প্রায় ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষারও ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু-পরবর্তীতে ‘বাজেট নেই’ অজুহাতে সেই উদ্যোগ থেমে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে ভাঙা হয় মাত্র ২টি। বাকিগুলোর মধ্যে কয়েকটি লোকদেখানো সংস্কার ও রং পাল্টে চালু রাখা হয়। গত শুক্রবার ভূমিকম্পের পর সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সক্রিয় হয়েছে জেলা প্রশাসন। বিপজ্জনক ভবন ভাঙার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এদিকে সিসিকের তালিকায় যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন সিটি সুপারমার্কেট, চালিবন্দরে একটি মার্কেট রয়েছে। এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে নগরীর সমবায় ব্যাংক ভবন, মধুবন সুপারমার্কেট, সুরমা মার্কেট, মিতালি ম্যানশন, রাজা ম্যানশন, যতরপুরের ২৬/এ নম্বর বাসা, আজমীর হোটেলসহ কয়েকটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর কোনোটিতে ফাটল, কোনোটির সিঁড়ি নড়বড়ে, আর কোনোটির পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা স্থানীয় ফল্টগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠায় ভূতাত্ত্বিকভাবে ‘ডেঞ্জার জোনে’ থাকা সিলেটে বড় ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সিলেট নগরীতে যমদূতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো ভবনগুলো বড় ধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছে। বড় ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন নগরবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম জানান, সিলেটের পুরোনো ভবনগুলো ‘নন ইঞ্জিনিয়ারিংভাবে’ তৈরি করা হয়েছে। বড় ভূমিকম্প হলে এগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ভবনের কোনোটি হয়তো সংস্কার করে ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলা সম্ভব হবে। আর ভবনগুলো অপসারণ করা গেলে সবচেয়ে ভালো। এটা করা না গেলে ঢাকায় যে গভীরতায় ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে একই রকম সিলেটে হলে পুরোনো ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, ‘সিলেট নগরীর ২৩টি বিপজ্জনক ভবন ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ভবন রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই অপসারণের কাজ শুরু হবে।’