কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পরই স্ত্রীর ওপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। রাত ২টায় ডেকে দেওয়া হতো তাকে। এরপর তাকে চিৎকার করে স্বামীর শোকে কাঁদতে হতো, যতক্ষণ না আশেপাশের মানুষ ঘুম থেকে জেগে না উঠে। এরপর তার মাথার চুল ন্যাড়া করে দেওয়া হয়, তাকে নগ্ন করে সবার সামনে গোসল করতে বলা হয়। তাকে নোংরা জায়গায় থাকতে বাধ্য করা হয়, কেউ তার আশেপাশে ঘেঁষতো না। কারণ তাকে নোংরা মনে করা হতো।
এরপর রোজ নামের সেই নারীকে বলা হল, স্বামীর আত্মীয়দের মধ্যে কাউকে বিয়ে করতে। এতে তিনি হতবাক হয়ে যান। নিরুপায় হয়ে তিনি নিজের সন্তানকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতে স্বামীর আত্মীয়স্বজনের অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। শুধু রোজই নয়, নাইজেরিয়ায় বহু বিধবাকে এমন নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এসব মেনে না নিলেও আরেক বিপদ, তাতে মনে করা হবে রোজই তার স্বামীকে হত্যা করেছেন। সেই অপরাধে তাকে সন্তানসহ সমাজচ্যূত করা হবে।
অথচ সুখের সংসার ছিল রোজের। নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের কাপড়ের ব্যবসা ছিল তার। ব্যবসার কাজে নানা জায়গা ভ্রমণ করতেন। খদ্দেরদের জন্য উচ্চ মানের ফেব্রিকসের খোঁজে নিয়মিত তুরস্কে যেতেন। কিন্তু স্বামীর কিডনি ডায়ালেসিসের জন্য তাকে সবকিছু কম দামে বিক্রি করে দিতে হয়। ২০১৫ সালে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন, এর দুই বছর পর ৫৫ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর রোজের ওপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন, তার দিকে খাবার ছুড়ে দেওয়া হতো। রোজের ভাষ্য, তারা এমনভাবে আমাকে লক্ষ্য করে খাবার ছুড়ে দিত যে মনে হতো আমি একটা কুকুর।
নাইজেরিয়ার বিধবাদের ওপর এমন নির্যাতন বন্ধে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারপরও এমন প্রথা বছরের পর বছর ধরে চলছে। শুধু নাইজেরিয়াতেই নয়, আফ্রিকার অনেক দেশেই বিধবাদের এই 'শুদ্ধিকরণ' প্রথা চালু রয়েছে। সূত্র: সিএএন
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা