করোনা মোকাবিলায় দুর্দান্ত সাফল্য দেখিয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্য। ভারতের প্রথম করোনা আক্রান্ত এই রাজ্যে শনাক্ত হলেও এখন সর্বোচ্চ আক্রান্ত রাজ্যের মধ্যে কেরালার অবস্থান অষ্টম। কেরালায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আছে ৩৮৭ তে, মারা গেছে মাত্র তিনজন। কেরালা যেভাবে করোনা মহামারির মোকাবিলা করছে, তা এখন শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও স্বীকৃতি পাচ্ছে ‘কেরালা মডেল’ নামে।
জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ভারতের প্রথম করোনা-আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায় কেরালা রাজ্যে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কেরালার মোট ৩৮৭ জন আক্রান্তের মধ্যে দুইশ’ এর কাছাকাছি সুস্থ হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। ভারতের অন্যত্র যখন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের, মৃতের সংখ্যা, অন্যদিকে কেরালা দেখাচ্ছে আশার পথ। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক টুইট করে নিশ্চিত করেছেন, যে করোনা সংক্রমণের বাঁক এখন নিম্নমুখী।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি কেরালা রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মিসেস কে কে শৈলজার বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেরালা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান যখনই এই ভাইরাসের কথা শোনা যায়, তখন থেকেই তারা প্রস্তুতি নিয়েছিল। ২০১৮ সালে আরেক ভাইরাস ‘নিপাহ’ কেরালা রাজ্যে ছড়িয়েছিল। ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল তখন।
সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা অনেক আগেই ঠিক করে নিয়েছিলেন কীভাবে করোনার মোকাবিলা করবে। তাই জানুয়ারির শেষদিকে প্রথম বিমানটি উহানে আটকে পড়া কেরালাবাসীদের নিয়ে নামা মাত্রই তারা প্রস্তুত হয়েছিলেন। বিমানবন্দরেই প্রত্যেকের তাপমাত্রা মাপা হয়। যাদের সামান্য উপসর্গও দেখা গেছে, তাদেরই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বিমানেই এসেছিলেন উহানে মেডিকেল পড়তে যাওয়া এক ছাত্র। তিনিই ছিলেন ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি।
কেরালায় বহু মানুষ মধ্য প্রাচ্যে থাকে, আবার বহু ছাত্রছাত্রী চীনেও পড়াশোনা করে। এদের সবার পরীক্ষা হয়েছে। যাদেরই অসুস্থতার লক্ষণ দেখা গেছে, তাদেরই কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা করা হয়েছে। কেউ কেউ নিজেদের সফরের ইতিহাস লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষমেশ যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আর লালারস পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েছে, তখনই সরকার প্রচুর লোকবল লাগিয়ে খুঁজে বার করেছে যে তারা দেশে আসার পরে কোথায় গিয়েছিল, কোন কোন মানুষের সঙ্গে দেখা করেছে সব কিছু।
‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ বা করোনা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি অন্য যাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের খুঁজে বার করা রীতিমতো খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো ঘটনা। কিন্তু রাজ্য স্তরে সেই দায়িত্ব একজন অফিসারকে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমটি চালু হয়েছে ২৪ জানুয়ারি থেকেই। সেখানে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য যেমন একজন দায়িত্বে ছিলেন, তেমনই আরও ১৭ জন বিশেষজ্ঞও নানা কাজের দায়িত্বে ছিলেন।
কারও কাজ লজিস্টিক্স সামলানো অর্থাৎ ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক যোগাড় প্রভৃতি, কোনও বিশেষজ্ঞর দায়িত্ব মানসিক চাপে যারা পড়েছেন, তাদের সামলানো। এভাবেই তারারা সংক্রমণ মোকাবিলার প্রত্যেকটা কাজ ভাগ করে দিয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে পর্যালোচনা হয় আর পরদিনের পরিকল্পনা তৈরি হয়। সেকারণেই হয়তো কেরালাকে উদাহরণ বানিয়ে করোনার স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক প্রকোপ থেকে নিস্তারের রাস্তা খুঁজছেন অনেকে। সূত্র : বিবিসি ও ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক