কুমিল্লার লাকসামে একই পরিবারের আট জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় শহরজুড়ে করোনা ঝুঁকির আশঙ্কা বেড়েছে। জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। নিরাপত্তার স্বার্থে শহরের দক্ষিণ লাকসাম (সাহাপাড়া) মহল্লাকে সম্পর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার দুপুরে এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল (শনিবার) শহরের দক্ষিণ লাকসামের (সাহাপাড়ার) দুই সহোদরের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তারা একসঙ্গে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে একটি ফার্মে চাকরি করতেন। ওই ফার্মের চাকরিরত তাদের এক সহকর্মী করোনায় আক্রান্ত হলে দুই সহোদরের মধ্যে একজন আক্রান্ত হওয়ার ১০/১১ দিন আগে তথ্য গোপন করে লাকসামে এসে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করেন। তিনি বাড়ি আসার ৬/৭দিন পর তাদের ওই সহকর্মী করোনায় মারা গেলে ২২ এপ্রিল (বুধবার) অপর ভাইও চৌমুহনী থেকে লাকসামে চলে আসেন। এসময় পরিবারের লোকজন তাকে বাসায় প্রবেশ বাধা দিলে সে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে গিয়ে গোসল করে ওই পরিবারের সংস্পর্শে যান।
পরে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের ও আশে-পাশের তিনটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে দুই সহোদরের নমুনা সংগ্রহ করে। গত ২৫ এপ্রিল (শনিবার) আইইডিসিআর থেকে প্রেরিত রিপোর্টে দুই সহোদরের করোনা পজেটিভ আসায় লাকসাম শহর জুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ‘করোনা র্যাপিড রেসপন্স টিম’ তাৎক্ষণিক দুই সহোদরের পরিবারসহ পার্শ্ববর্তী আরও একটি পরিবারের ১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে প্রেরণ করে। গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) তাদের মধ্যে ৬ জনের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তারা সকলেই ওই দুই সহোদরের পরিবারের সদস্য।
আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন, দুই সহোদরের ৭২ বছর বয়সী বাবা, ৬০ বছর বয়সী মা, ৩৬ বছর বয়সী বড় সহোদরের ১৪ বছর বয়সী কন্যা, ১২ বছর বয়সী পুত্র সন্তান এবং ছোট সহোদরের স্ত্রী ২৬। দুই সহোদরের মধ্যে বড় জনের বয়স ৪২ বছর ও ছোটজনের ৩৬ বছর।
একই পরিবারের ৮ জন করোনায় আক্রান্তের বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা ও পৌর প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে ভাবিয়ে তোলে। তারা খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওই পরিবারের সদস্যরা রিপোর্ট আসার পূর্ব মুহূর্তে তথ্য গোপন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে দক্ষিণ সাহাপাড়া মহল্লায় অবাধে বিচরণ করেছেন। এ এলাকার সন্নিকটে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক, অস্থায়ী কাঁচাবাজার ও দৌলতগঞ্জ বাজারের অবস্থান হওয়ায় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের ‘করোনা র্যাপিড রেসপন্স টিম’ সামাজিক সংক্রমণের আশঙ্কা প্রকাশ করে। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা ও পৌর প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে শহরের দক্ষিণ লাকসাম এলাকা সম্পূর্ণ লকডাউন করা ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রয়োজনের বাইরে কেউ বাসা-বাড়ির বাইরে যাবেন না। সকলেই স্বাস্থ্য বিধি মেনে বাসা-বাড়িতে নিরাপদে থাকুন। আপনাদের স্বাস্থ্য সেবায় আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম সাইফুল আলম বলেন, লাকসাম শহরে একই পরিবারের আট সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দক্ষিণ লাকসাম (সাহাপাড়া) সম্পূর্ণ লকডাউন করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সড়ক পথে এ এলাকায় কেউ প্রবেশ কিংবা বের হতে পারবেন না। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন