২১ জুলাই, ২০২০ ০৮:০৫

মানবদেহে যেভাবে কাজ করবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন

অনলাইন ডেস্ক

মানবদেহে যেভাবে কাজ করবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে নাকাল গোটা বিশ্ব। এরই মধ্যে ভাইরাসটির ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা। এই ভাইরাসের প্রকোপে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও ব্রাজিলের মতো দেশ। এখনও পর্যন্ত শতভাগ কার্যকরী ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় বিশ্বব্যাপী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে এই ভাইরাস।

তবে এর মধ্যেই সুখবর দিল যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার তারা জানিয়েছে, তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন মানুষের জন্য নিরাপদ এবং করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কিভাবে মানুষের শরীরে কাজ করবে এই ভ্যাকসিন? কতগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে? কারা আগে পাবে? দাম কেমন পড়বে? আসুন জেনে নেওয়া যাক এসব প্রশ্নের উত্তর।

যেভাবে কাজ করবে:
অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটির নাম ChAdOx1 nCoV-19. অভূতপূর্ব গতিতে এটার উন্নতি সাধিত হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ঠাণ্ডা লাগার জন্য যে মৌলিক বিষয়টি দায়ী সেটার জীন নিয়ে গবেষণা করে। গবেষণার মাধ্যমে প্রচুর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন শেষে মানুষের শরীরে প্রয়োগযোগ্য করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। ফলে এটি মানুষের শরীরে কোনও সংক্রমণ ঘটাতে দেবে না এবং একই প্রক্রিয়ায় এটি করোনাভাইরাসকেও রুখে দিতে সক্ষম হবে।

করোনাভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করে সেটা নিয়ে গবেষণা করে এর ভিত্তিতে জেনেটিক নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। সুতরাং এটি করোনাভাইরাস রুখে দিতে পারবে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হবে।

আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে যে প্রোটিন উৎপাদিত হয় (অ্যান্টিবডি) এবং যে প্রোটিনটি করোনাভাইরাসের উপরিভাগে থাকে সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন। অ্যান্টিবডিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার মাধ্যমে ভাইরাসটিকে অক্ষম করে দেওয়া সম্ভব।

পাশাপাশি আমাদের শরীরের যে টি-সেল রয়েছে (এক ধরনের লোহিত রক্ত কণিকা) যেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহায়তা করে এবং ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ ও ধ্বংস করে সেটার সক্ষমতা বাড়াবে অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন।

মূলত সব ধরনের ভ্যাকসিনই অ্যান্টিবডি ও টি-সেলকে প্রভাবিত করে কাজ করে।

কতটা নিরাপদ এই ভ্যাকসিন?
অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর জ্বর কিংবা মাথাব্যাথা হতে পারে। যেটা প্যারাসিটামল সেবনে সেরে যাবে। ভ্যাকসিনটির আবিষ্কারক প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, এখনও তাদের অনেক কাজ ও গবেষণা বাকি রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করে পুরোপুরিভাবে ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত করেই বাজারে ছাড়া হবে।

শিগগিরই বড় পরিসরে এটার ট্রায়াল শুরু হবে। যেখানে যুক্তরাজ্যের ১০ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার, ব্রাজিলের ৫ হাজার ও দক্ষিণ আফ্রিকার ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেবেন।

কবে নাগাদ পাওয়া যাবে ভ্যাকসিন?
সমস্ত গবেষণা ও প্রক্রিয়া শেষে আশা করা যাচ্ছে চলতি বছরের শেষ দিকেই এই ভ্যাকসিন সীমিত আকারে বাজারে পাওয়া যাবে। পরবর্তী বছরের শুরুতে বড় আকারে পাওয়া যাবে।

কাদের প্রথম দেওয়া হবে এই ভ্যাকসিন? 
প্রথমদিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এরপর আগামী বছর বিস্তৃতভাবে বিতরণ শুরু হবে।

কতগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে?
যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজ অর্ডার দিয়ে রেখেছে। নতুন বছরে হয়তো এটার উৎপাদনের সংখ্যা বিলিয়ন ডোজ ছাড়িয়ে যাবে।

দাম কত পড়বে?
এখনও অবশ্য দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এটার এখনও অনেক গবেষণা বাকি রয়েছে, ট্রায়াল বাকি রয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। এসব কিছু ঠিকঠাকভাবে করার পরেই বাজারে ছাড়া হবে।

যেহেতু এই ভ্যাকসিন মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন, বৈশ্বিক চাহিদার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকছে, সুতরাং আশা করা যায় মানবিক দিক বিবেচনা করে এটার চড়া মূল্য হবে না। বিভিন্ন সময় এই ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠানগুলো এমনই আশ্বাস দিয়েয়েছেন।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

সর্বশেষ খবর