শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বরিশালে গায়েবি ক্ষতি দেখিয়ে অর্থ বরাদ্দ

২৩ প্রাথমিক স্কুল সংস্কারে অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে গায়েবি ক্ষতি দেখিয়ে অর্থ বরাদ্দ

গৌরনদী টরকীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো স্কুলে নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দ লোপাট করা হয়েছে। আবার কয়েকটি বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও সেগুলোতে টিনশেড ঘরের অস্তিত্ব নেই। গৌরনদী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠান। সংস্কারের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কুতুবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সমরসিংহ, লাখেরাজ কসবা, টরকীর চর, ইল্লা, নরসিংহলপট্টি, বিল্বগ্রাম, উত্তর রামসিদ্দি, উত্তর চাঁদশী, কাঁঠালতলী, মিয়ারচর, জয়শুরকাঠি, সাহেবেরচর, দক্ষিণ হোসনাবাদ ও কান্ডপাশাসহ ২৩টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে দেড় লাখ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকায় থাকা টরকীর চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি পাকা ভবন রয়েছে। এর কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই বিদ্যালয়কে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় দেখিয়ে সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হাছান বলেন, পুরনো ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় বরাদ্দের টাকায় ছাদে প্যাটেনস্টোন করা হয়েছে। বেজগাতি মৈস্তারকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি পাকা ভবনেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। অথচ ওই বিদ্যালয়টিকে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে অর্থ বরাদ্দ। এই বিদ্যালয়ে টিনশেড ঘর না থাকলেও একটি টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কথা উল্লেখ করা হয়। তবে ওই বিদ্যালয়ে হয়নি কোনো সংস্কার কাজ।  বেজগাতি মৈস্তারকান্দি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্পনা রানী জানান, তাদের বিদ্যালয়ে আগে একটি টিনশেড ঘর ছিল। তিন বছর আগে পাকা ভবন হয়েছে। বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করা হয়নি। বরাদ্দের অর্থ দিয়ে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণের কথা বলেন তিনি। একইভাবে ইল্লা এবং পূর্ব সরমসিংহ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও আম্ফানে কোনো ক্ষতি হয়নি, তবু তারা বরাদ্দ পেয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা লাখেরাজ কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সমরসিংহ, টরকীর চর ও ইল্লাসহ অধিকাংশ বিদ্যালয় কাজ হয়েছে নামমাত্র। অথচ বরাদ্দের পুরো টাকা তুলে সংশ্লিষ্টরা লোপাট করেছেন এমন অভিযোগ অভিভাবকদের। একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যে সব প্রধান শিক্ষকের সখ্য রয়েছে সেই সব বিদ্যালয় ঝড়ে ক্ষতি না হলেও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাভুক্ত করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল জামিল বলেন, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার সম্পন্ন করেছে- এমন প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। এরপর তাদের বিল দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।

 

সর্বশেষ খবর