বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

খাসজমিতে ঠাঁই হচ্ছে না ভূমিহীনদের

৪ হাজার ২০০ একর জমি পড়ে আছে পরিত্যক্ত

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

ভোলার চরফ্যাশন ঢালচর ইউনিয়নে মেঘনার তীব্র ভাঙনে আশ্রয়হীন গৃহহারা ১ হাজার ৪০০ ভূমিহীন পরিবারের ঠাঁই হচ্ছে না সরকারি খাসজমিতে। প্রায় ৩৫ বছর ধরে হাই কোর্টে রায় পেয়েও সীমানা নির্ধারণের পর ভূমিহীন কৃষকদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ফলে মাথা গোঁজা নিশ্চিত করতে না পেরে ঢালচরের ১ হাজার ৪০০ আশ্রয়হীন পরিবার পরিত্যক্ত বেড়িবাঁধের ঢালে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্থানীয় ঢালচর বনবিভাগের জবরদখলের কারণে ক্ষোভ বাড়ছে গৃহহারা ভূমিহীন পরিবারের। জানা গেছে, ১৯৫০ সালে বঙ্গোপসাগর মোহনার ঢালচর দ্বীপের সূচনা হয়। ২০১০ সালে চরফ্যাশন উপজেলার ১৯ নম্বর ঢালচর ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৬ সাল থেকে অব্যাহত নদীভাঙনে ঢালচরের দুই-তৃতীয়াংশ বিলীন হলে এখন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। ঢালচরের ১ হাজার ৭০০ পরিবারের ১৮ হাজার মানুষ এখন ৭ থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত এই তিনটি ওয়ার্ডে ভিড় করেছে। কিন্তু এখানে এ পরিমাণ জনবসতির সংকুলান যেমন সম্ভব নয় তেমনি এখানে তাদের নিজস্ব কোনো জমিও নেই। ভূমিহীন কৃষকদের নিজস্ব জমি না থাকলেও ঢালচর থেকে তারুয়া পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ২০০ একর জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মেঘনার ভাঙনে গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারগুলোর পরিত্যক্ত চাষযোগ্য ৪ হাজার ২০০ একর জমিতে নিজেদের অধিকারের দাবি নিয়ে হাই কোর্ট থেকে রায় পেয়েও ৩৫ বছর যাবৎ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

ভূমিহীন কৃষক আবদুল কালাম মেম্বার জানান, ঢালচরের পূর্বাশং মেঘনায় ভাঙনের ফলে গৃহহীন ১ হাজার ৫০০ পরিবার দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরের পরিত্যক্ত চাষযোগ্য ২ হাজার ৭০০ একর জমি বন্দোবস্ত চেয়ে আসছেন। বনবিভাগের বাধার কারণে ভূমিহীন কৃষকরা ১৯৮৬ সালে ভোলা সাবজজ আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানির পর ১৯৯০ সালে ঢালচর চর সত্যেন যৌথ ভূমিহীন কৃষক সমবায় সমিতির পক্ষে রায় প্রদান করেন। ১৯৯২ সালে বনবিভাগে হাই কোর্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ১৯৯৭ সালে চরফ্যাশন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে প্রেরণ করেন। ২০১৯ সালে ভূমিহীন কৃষকদের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য আদালত রায় প্রদান করেন। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে ২৭ একর জমি তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বন্দোবস্ত প্রদানের নির্দেশ দেন। নির্দেশ প্রাপ্তির পর চরফ্যাশন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন গিয়ে ঢালচরের ৪ হাজার ২০০ একর জমির সীমানা নির্ধারণ করে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরপর কিছু কিছু ভূমিহীন কৃষক পরিবার ওই জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসতি শুরু করেন। এই বসতি উচ্ছেদের জন্য বনবিভাগ ওই পরিবারগুলোর ওপর হামলা ও মামলা দিয়ে নানাভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। ঢালচর বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা টিএস আতিকুর রহমান জানান, পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরে ৪ হাজার ২০০ একর খাসজমি পরিত্যক্ত আছে। মানবিক কারণে যেখানে ঢালচরের মেঘনার ভাঙণে আশ্রয়হীন পরিবারের মধ্যে খাসজমি বন্দোবস্তের মাধ্যমে বসতি দেওয়া সম্ভব। চরফ্যাশন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ্বাস জানান, বিষয়টি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এখনো টানাপোড়েন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর