রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কলাপাড়ায় ঝুঁকিতে ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুই বেলা রাবনাবাদ নদীর তোড়ে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে বসতি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

কলাপাড়ায় ঝুঁকিতে ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বেড়িবাঁধ সঠিক সময়ে মেরামত না করায় নদীর পারের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তা বে এ উপজেলায় ৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৩৩০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে পূর্নিমা, অমাবস্যা কিংবা অতিবৃষ্টি হলেই নদীর পারের এসব মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। আকাশে মেঘ দেখলেই তারা আতঙ্কে থাকেন। কারণ সাগরপারের অভাবী মানুষগুলো স্বচক্ষে দেখেছে বিভিন্ন সময়ে বয়ে যাওয়া প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের সিডরের পর গত ১৩ বছরে একাধিক ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলেও এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তা বের পর যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। ঝড়ের ঝাপটায় ঘরের কিছুটা ক্ষতি হলেও সেখানে এখন বসবাসের উপায় নেই। প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুই বেলা রাবনাবাদ নদীর তোড়ে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে বসতি। নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ গ্রামে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এদিকে উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর, কোমরপুর ও সুদিরপুর বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তা বে উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর পয়েন্টে এক দশমিক ৫০ কিলোমিটার, দেবপুর পয়েন্টে এক দশমিক ৫০ কিলোমিটার, গ্লামারি পয়েন্টে দশমিক ৩০ কিলোমিটার, ধূলাসার পয়েন্টে দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার, পশরবুনিয়া পয়েন্টে দশমিক ১১ কিলোমিটার জোয়ারের পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ও  ধূলাসার পয়েন্টে  দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরুরি সংস্কারের কাজ চলছে। বাকি বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে লালুয়া ইউনিয়নের প্রায় ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিডরের সময় বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে আর সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে গোটা লালুয়া ইউনিয়ন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময়ে শুধু তাই নয়। বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিদিন দু’বার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। প্রতিদিন দু’বার পানি ওঠা-নামা করায় এলাকার মাটির রাস্তাগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। রাবনাবাদ নদী পড়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ফিরোজা বেগম বলেন, ৭০, ৯০’র বন্যা ২০০৭ সালের সিডর এরপর আইলা, মহাসেন, আম্পান ঝড় তারা মোকাবিলা করেছেন। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তাদের গৃহহারা করে ফেলেছে।  লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, এ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জো’তে। জোয়ার-ভাটার কারণে লালুয়ার ২০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক অনেকটা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে ইউনিয়নের মানুষ সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির খবর পেলেই থাকে আতঙ্কে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খেপুপাড়া উপ-বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, অক্ষত বেড়িবাঁধগুলোর মধ্যে ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের ধূলাসার পয়েন্টে  দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে জরুরি ভিক্তিতে সংস্কার কাজ চলছে। বাকি বেড়িবাঁধ পুনঃসংস্কার প্রকল্প প্রণয়ন চলছে। যা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কুয়াকাটা স্থায়ী বীচ রক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে সাড়ে সাতশত কোটি টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর