মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

নারীর হাতে ঘুরছে অর্থনীতির চাকা

দিনাজপুর প্রতিনিধি

নারীর হাতে ঘুরছে অর্থনীতির চাকা

দিনাজপুরসহ সারা দেশেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলছে লকডাউন, তখনো গৃহস্থালির পাশাপাশি আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ততা বেড়েছে আদিবাসী নারীদের। এক সময় গৃহস্থালির পাশাপাশি বনজঙ্গলে ঘুরে খড়ি এবং গাছের পাতা সংগ্রহই আদিবাসী নারীদের প্রধান কাজ ছিল। কিন্তু এখন পাল্টেছে সেই চিত্র। পুরুষদের পাশাপাশি আদিবাসী নারীরা এখন দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। তাদের হাত ধরেই ঘুরছে পরিবারের অর্থনীতির চাকা। অভাবের সংসারে ফিরেছে তাদের অনেকের সচ্ছলতা। জানা যায়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় আদিবাসী রয়েছে প্রায় ২১ হাজার। এদের মধ্যে ১১ হাজার পুরুষ এবং ১০ হাজার নারী। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা এখন কৃষি, কুটির শিল্প এবং উদ্যোক্তা হিসেবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও এগিয়েছে তারা। এ ব্যাপারে নারী কৃষি শ্রমিক আরতি সরেন জানান, আদিবাসী নারী কৃষি শ্রমিকের দল তৈরি করেছি। দলের ৮ সদস্য মিলে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে মাঠে আমন ধান রোপণের কাজ করছি। সারা দিনে ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। এতে করে প্রতিদিন আয় হয় ৬ হাজার ৪০০ টাকা। কাজ শেষে আমাদের জনপ্রতি আয় হয় ৮০০ টাকা। উপার্জন বাড়ার কারণেই ছেলে-মেয়েদের কাজে না দিয়ে স্কুলে দিতে পেরেছি। মাধবী মার্ডি জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে একজনের আয়ে সংসারের অভাব দূর হয় না। তাই বাধ্য হয়ে মাঠে কাজে এসেছি। এখন সংসারে আর অভাব নাই। বরং প্রতিদিনের আয়ে সংসারে চাল-ডাল কিনে কিছু টাকা থেকে যায়। সেই টাকা সন্তানদের জন্য সঞ্চয় করি। আদিবাসী নারী পরিষদের সদস্যা রানী হাসদা বলেন, শুধু কৃষিতে নয় সব কর্মক্ষেত্রে আমাদের এসব নারীরা অনেক দূর এগিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজের লোকজনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। উন্নয়নে অবদান রাখতে এই নারীদের সুযোগ করে দিতে হবে। বীরগঞ্জ উপজেলা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বাজুন বেসরা বলেন, আদিবাসী নারীদের এগিয়ে নিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। কুটির শিল্পসহ উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহযোগিতা এবং ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আদিবাসী নারীদের শিক্ষা ব্যয়ভার বহনে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতধারায় নিয়ে আসতে কাজ করছে সরকার। উন্নয়নে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে পশুপালন প্রশিক্ষণ দিয়ে গরু এবং ঘর তৈরির সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। আদিবাসী ছাত্রীদের উপবৃত্তি এবং বাইসাইকেল প্রদান করা হয়েছে। তাদের অনেক পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার প্রদান করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর