বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বেদে পল্লীতে হতাশা

নজরুল মৃধা, রংপুর

বেদে পল্লীতে হতাশা

রংপুর নগরীর অদূরে নিসবেতগঞ্জ ঘাঘট নদের পাশে কয়েকদিন হয় আস্তানা গেড়েছে বেদে সম্প্রদায়ের একটি দল।  ৪৩ জনের এই দলটি থাকেন ২৩টি ঝুপড়িতে। দলে ২২ জন পুরুষ,  নারী শিশু মিলে রয়েছেন ২১ জন। নওগাঁ থেকে এসেছেন। বহরে শিশু রয়েছে কম পক্ষে ১৩ জন। এর মধ্যে মাতৃদুদ্ধ সেবনকারী রয়েছে বেশ কয়েকজন শিশু। কদিন  থেকে রংপুরে থাকলে তেমন একটা আয় হয়নি। তাই সবার চোখে মুখে এক ধরনের অনিশ্চয়তার ছায়া। কথা হয় বহরের সর্দার মো. মিনহাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো মানুষ সাপের খেলা দেখেন না। টোটকা ওষুধও কেউ কেনেন না। তাই তাদের আয় কমে গেছে।  তার পরেও বাপ-দাদা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই পথের ধারে খোলা স্থানে ডেরা গেড়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। সর্দার জানান, তার বাবা আপাই মিয়াও সর্দার ছিলেন। বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সর্দারী পেয়েছেন।  লেখাপড়া প্রসঙ্গে তাদের বহরে থাকা বেশ কয়েকজন শিশু, কিশোর-কিশোরী সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন জীবনে কোনো দিন স্কুলে যাওয়ার সুয়োগ হয়নি। তাই লেখাপড়া হয়নি। তবে সর্দার মিনহাজুল বললেন, বহরে সুমন নামে  আটক্লাস পাস করা এক ছেলে রয়েছে। সেই ছেলেটিই এখানকার বাচ্চাদের অক্ষর জ্ঞান দিচ্ছে। পেটের দায়ে অনেকেরই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। বলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন স্থায়ীভাবে কোথাও থাকা হয় না বলে ছেলে মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন- আগে নৌকায় একস্থান থেকে আরেক স্থানে যেতাম। এখন বাসে চলাচল করতে হয়। ফলে আমাদের নদীর ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। বহর বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, বেদে-বেদিনীদের দাম্পত্য জীবনে একাধিক সন্তান রয়েছে। তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ গ্রহণে আগ্রহী নন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে বেদেরা স্বামী হিসেবে কেমন এমন প্রশ্নের উত্তরে যা বুঝা গেল তা হলো যারা অলস স্বামী হিসেবে তারাই বেদেনীদের কাছে উত্তম স্বামী। বেদেনীরা আধুনিক এই যুগেও মনে করেন স্ত্রীরা কাজ করে স্বামীকে খাওয়াবেন। স্বামী কোনো কাজ করবেন না। তবে অনেক স্বামীই স্ত্রীদের সঙ্গে কাজ করে সংসারে সাহায্য করছেন। বহরে থাকা কাকলি, আরজিনাসহ কয়েকজন জানালেন তাদের কষ্টের কথা। তারা বলেন- আমরা যেখানেই যাই না কেন  ওই স্থানের কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা কোনো রাজনীতিবিদ আমাদের সাহার্য্যে এগিয়ে আসেন না। তারা বলেন- রংপুরে এখন শীত পড়েছে। গরম কাপড়ের অভাবে আমরা শীত কষ্টে রয়েছি।  প্রচীন ধ্যান ধারণা এখনো বদলাতে না পারলেও আধুনিকতার কিছুটা ছোঁয়া লেগেছে বহরে। তা বুঝা গেল একটি ডেরার সোলার লাইট দেখে। রাতের অন্ধকার দূর করতে তাদের অনেকেই সোলার লাইট ব্যবহার করছেন। তবে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুতেই তাদের  প্লাস্টিক কিংবা চটের ডেরায় বাস করতে হয়। তবে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে তারা সাভার, মুন্সীগঞ্জের মূল ডেরায় ফিরে যান। সে সময় বিয়ে শাদিসহ বিভিন্ন উৎসব পালন করেন। ইতিহাস লেখক জোবায়ের আলী বলেন, বেদেদের সাধারণত ৮টি গোত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এই গোত্রগুলো হলো মালবেদে, সাপুড়িয়া, বাজিকর, সান্দার, টোলা, মিরশিকারী, বরিয়াল সান্দা ও গাইন  বেদে। বেদেরা সাধারণত কার্তিক মাসের ৫ তারিখ  থেকে অগ্রহায়ণের ১৫ তারিখ মূল ডেরায় ফিরে যান। তবে তারা যেখানেই যাক না কেন গোত্র প্রেমের কারণে সারা দেশের বেদে সম্প্রদায়রে সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর