শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

১০ বছরে তিস্তায় বসতভিটা-জমি হারিয়েছে ৩ লাখ পরিবার

নজরুল মৃধা, রংপুর

১০ বছরে তিস্তায় বসতভিটা-জমি হারিয়েছে ৩ লাখ পরিবার

তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গত ১০ দিনে তিস্তার পানি এ পর্যন্ত পাঁচবার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। উজানের ঢল এবং ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও তিস্তসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে গত ১০ বছরে তিস্তার করাল গ্রাসে সাড়ে ৩ লাখের বেশি পরিবার বসতভিটা ও জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে বুধবার সকালে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে ৫১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। গত ২১ জুন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর। এর আগের দিন বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমটার ওপর, ১৯ জুন বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর, এর আগের দিন  ১২ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। 

জানা গেছে, রংপুর বিভগের পাঁচ জেলার ১২টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। দেশের দরিদ্র চারটি জেলার অবস্থান রংপুর বিভাগে। এগুলো হচ্ছে- রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলা। আর দরিদ্রতার প্রধান কারণ হচ্ছে নদীভাঙন। নদীভাঙনে জমি-বসতভিটা হারিয়ে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছেন। গত ১০ বছরে সাড়ে ৩ লাখের বেশি পরিবার নিরাশ্রয় হয়েছে। তাদের কেউ চরে,  কেউ বাঁধে আবার কেউ শহরে গিয়ে দিন মজুরি করে কোনো রকমে বেঁচে রয়েছেন। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নদীর পরিচর্যা করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে- এমনটা মনে করছেন তিস্তা নদী নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তারা। 

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদি জানান, গত বছরের বন্যায় তার ইউনিয়নে প্রায় আড়াই শ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে জমি-বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তিনি বলেন, এবার কয়েক দফা পানি বৃদ্ধিতে তার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে গেছে। নদী বিষয়ক গবেষক ও রিভারাইন পিপল কমিটির পরিচালক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিদ ওয়াদুদ বলেন, প্রতি বছর তিস্তা নদীবেষ্টিত ১২ উপজেলার দুই পাড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পরিবার নদীভাঙনের শিকার হন। এই অঞ্চলে দরিদ্রতার প্রধান কারণ হচ্ছে নদীভাঙন। গত ১০ বছরে ৩ লাখের বেশি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞানসম্মত তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলে দরিদ্রতা কমার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও যোগ হবে নতুন দিগন্ত। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, নদীর পানি বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর