বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা

নাটোর প্রতিনিধি

খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা

নাটোরের আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। এ ছাড়া ওয়ার্ডের শয্যা সংকটের রোগীরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বারান্দা এবং মেঝেতে গাদাগাদি করে থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। হাসপাতালে দেখা যায়, মেঝে ও খোলা বারান্দায় অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা। প্রচ- গরমে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন স্বজনরা। গরমে অনেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগীর চাপ এতই বেশি যে রোগীদের মেঝেতে রাখার মতো জায়গাও নেই। এতে অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগীও এখানে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসকদের। প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না অনেক রোগী। এ ধরনের অব্যবস্থাপনার কারণে কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে কিছুটা অনিয়ম হলেও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। জানা যায়, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থেকে ১১ জন চিকিৎসক কম। একজন প্যাথলজিস্ট দিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই ৩৬ জন। একজন চিকিৎসক ওয়ার্ডে রোগী ও বহিঃবিভাগে রোগী দেখছেন। তবে শয্যা সংকটই বেশি। জেলার সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ রোগী বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ১০০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ২০০ জন। পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে কাটা ছেঁড়া ও অপারেশন। রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট কাজ করেন। দুপুর ১২টার পরে আর কোনো পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। সদর উপজেলার দস্তানাবাদ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সুমাইয়া জানান, সকাল আটটা থেকে ছয় মাসের শিশুকে নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞের চেম্বারের সামনে বসে আছি। দুপুর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি। নলডাঙ্গা উপজেলার শাঁখারিপাড়া থেকে আসা জরিনা বেগম জানান, প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা খরচ বেশি। তাই পাঁচ টাকায় টিকিট কেটে সকাল থেকে বসে আছি। তিন ঘণ্টা পার হলেও দেখা নেই চিকিৎসকের। হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে সদর উপজেলার গুনারীগ্রামের ইলিয়াস আলী জানান, চিকিৎসক ভিতরে বসে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করছেন। আর মাঝে মধ্যে একজন করে রোগী দেখছেন। সদর উপজেলার কাফুরিয়া থেকে শিশু ফাহিমকে নিয়ে রবিবার সকালে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন কেয়া। সব সেবা ঠিকমতো দিলেও রাইচ স্যালাইন ও বায়োকিট নামে দুটি ওষুধ বাহির থেকে কিনেছেন। শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ চন্দনা দেব নাথ জানান, যে সব ওষুধের সরবরাহ নেই শুধু সেই ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধের মজুদ আছে। ওয়ার্ডে ১৪ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৪ জন। হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জ রেবেকা সুলতানা জানান, ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় রোগীদের কম করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে চাহিদা মতো দেওয়া হবে। হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরের দায়িত্বে থাকা ডোম জয় কুমার জানান, পুরাতন বেড, কাঁচিও ছেনি দিয়ে লাশের কাটা ছেঁড়া করতে হয়।

এতে সময় বেশি লাগে।

নতুন যন্ত্রপাতির জন্য ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ পাওয়া যায়নি। পেলে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক সুমনা সরকার জানান, সকাল আটটায় হাসপাতালে এসে ওয়ার্ড পরিদর্শন করতে হয়। তার পরে নতুন রোগীর সমস্যা দেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এতে করে বহিঃ বিভাগের চেম্বারে বসতে দেরি হয়। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়ালে সঠিক সময়ে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।  আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সামিউল ইসলাম শান্ত জানান, জেলার সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৩০০ থেকে ১৫০০ রোগী বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ১০০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ২০০ জন। বাধ্য হয়ে বারান্দা ও মেঝেতে রাখা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে রোগীদের পরামর্শ দিতে দেরি হয়।  হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় জানান, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থেকে ১১ জন চিকিৎসক কম। একজন প্যাথলজিস্ট দিয়ে চলছে কাজ। পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই ৩৬ জন। একজন চিকিৎসক ওয়ার্ডে ও বহিঃবিভাগে রোগী দেখছেন। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষের দিকে। হাসপাতালটি ছয়তলা ভবনের কাজ শেষ হলে সমস্যা সমাধান হবে। সরকারি কোম্পানি ইডিসিএল চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ না করায় রোগীর পরামর্শ পত্রের চাহিদামতো ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর