শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থের বিনিময়ে প্রাথমিক শিক্ষকের পদোন্নতির অভিযোগ

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার বেড়া উপজেলাধীন পুরান মাশুমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রাজ্জাকের পদোন্নতি প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ এনে তার পদোন্নতি বাতিল ও স্বপদে ফেরত পাঠানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন, উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত আট শিক্ষক। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি অন্য শিক্ষকদের বঞ্চিত করে এ কাজটি করেছেন বলে, লিখিত অভিযোগ করেছেন সহকর্মীরা। অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই শিক্ষক ২০০৩ সালে আইডিএ সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ৬০ নম্বর পুরান মাশুমদিয়া কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছিলেন। ২০০৫ সালে আত্তীকরণের মাধ্যমে তিনি রাজস্বভুক্ত হন এবং বকেয়া বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করেন। এ পদে বহাল থাকাকালে তিনি রাজস্ব খাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে উপজেলার রূপগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং প্রকল্প থেকে ইস্তফা দেন। এ পদে যোগদান করলেও সে-সংক্রান্ত কোনো তথ্যাদি তার সার্ভিস বইতে লিপিবন্ধ করেননি। অথচ বেড়া উপজেলার শিক্ষা অফিস তাকে প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রদান করেন।

প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) পদে তার নাম পদোন্নতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে পদোন্নতি প্রদান করেন। বর্তমানে তিনি রাজস্ব নাকি প্রকল্পভুক্ত শিক্ষক তা কেউ জানেন না। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলার বেশ কয়েকজন শিক্ষক এর আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে অভিযোগের বিষয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম সরেজমিন তদন্ত করে, একটি প্রতিবেদন অফিসে দাখিল করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বেড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করেন। ওই প্রতিবেদন ও নোটিসের কপিতে উল্লেখ রয়েছে, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের বিধি ২ শাখা থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে গ্রেডেশন নীতিমালা লঙ্ঘন করে আপনার দফতরের সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকার ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮ ও ৪৯ ক্রমিকে বর্ণিত সাতজন সহকারী শিক্ষককে জ্যেষ্ঠ নীতিমালা লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করার কারণ ব্যাখ্যাসহ আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দাখিল করার জন্য এবং এ বিষয়ে জানার পর কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা এ দফতরে জানানোর জন্য নির্দেশ দেন।

বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না করে বদলি হয়ে যান এবং পরবর্তীতে আবদুস সালাম শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এবং তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে যান। সে সময় আবদুস সালাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্লিপ বরাদ্দের অর্থের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর স্ট্যান্ড রিলিজ হন। এরপরে বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন কফিল উদ্দিন। প্রাথমিকের ভুক্তভোগী শিক্ষকরা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আগের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ শিক্ষা অফিসে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও বর্তমান কর্মকর্তাও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন বলেন, তিন-চার দিন হলো অভিযোগ পেয়েছি। এটা ২০১৮ সালের ঘটনা, তদন্ত না করে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আবদুর রাজ্জাকসহ বঞ্চিত সব শিক্ষদের পদোন্নতির বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে তাদের কাগজপত্র চেয়েছি। তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর জানানো হবে। এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. সবুর আলী বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। তারপরও তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর