রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়া নাব্য সংকটে যমুনা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়া নাব্য সংকটে যমুনা

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে হেঁটে যমুনা নদী পারাপার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীতে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। এতে দুই পারের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে নদী পারাপারে। চরে উৎপাদিত ফসল পরিবহনে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। পানি কমে যাওয়ায় খেয়াঘাট পরিবর্তন হয়েছে। ফলে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে নদী পার হতে হচ্ছে।  জানা যায়, ১৯৯৮ সালের পর থেকে যমুনার উজান নদী ভরাট হয়ে চর জাগতে শুরু করে। এখন বঙ্গবন্ধু সেতুর উজানে সিরাজগঞ্জ থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটারে ছোট-বড় চর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। এক সময়ের প্রমত্তা যমুনা নাব্য হারিয়ে বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যমুনার বুকে এখন ধু ধু বালুচর। মাইলের পর মাইল হেঁটে চরে বসবাসরত মানুষকে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শিক্ষার আলো, স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক সেবাসহ প্রায় সব ধরনের নাগরিক সেবা বঞ্চিত যমুনার চরের মানুষ। বালির মাঝে চাষাবাদ এবং গরু-ছাগল পালন তাদের প্রধান পেশা। এখন অবশ্যই অনেক চরে মরিচ, আলু, বাদাম, গম, ভুট্টাসহ প্রায় সব রকম ফসল চাষ হয়। তারপরও এ চারের কৃষিকরা বঞ্চিত কৃষি সেবা থেকেও। এসব বালুচরের কারণে বর্ষা মৌসুমেও নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। উজান থেকে আসা সামান্য ঢলের পানিতেই নদী পরিপূর্ণ হয়ে আবার অকাল বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পর পরই নদীতে নতুন নতুন চর জেগে উঠায় নৌকা আর চলে না। উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজে বাজারে নেওয়া যায় না। বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে হাট-বাজার, অফিস আদালত, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজে সময়মতো আসা তাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে। চরাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদী নাব্য হারিয়ে ফেলায় চরে তাদের বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে উপজেলার চার ইউনিয়নের মৌজার জমি পুনরায় জেগে উঠেছে। এসব জমিতে নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, যমুনার মূল উৎপত্তি পাশের দেশ ভারতে। উৎপত্তিস্থল থেকে যখন পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন এর গতি থাকে অনেক। পানির গতির কারণে ভরতের অংশের মাটি বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন টন বাংলাদেশ অংশের নদীতে পরে। ক্রমান্বয়ে নদী ভরাট হতে থাকে। নদীর গভীরতা কমে বর্ষা মৌসুমে অল্প পানিতেই বন্যার সৃষ্টি হয়।  সারিয়াকান্দি পৌরসভার বাসিন্দা আপেল মাহমুদ লাভলু জানান, শত বছর ধরে যমুনা নদী ভাঙনের ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১০৫টি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সারিয়াকান্দির অংশে এখন তেমন নদী নেই। বড় বড় চর জেগে উঠেছে। বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় যমুনা নদী খনন করে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে এর নাব্য রাখা হবে। এ জন্য পাউবো কাজ করছে। শিগগিরই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর