শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

শেরপুরের নদীতে অবৈধ বালু তোলার হিড়িক

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

শেরপুরের নদীতে অবৈধ বালু তোলার হিড়িক

শেরপুরে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রির জন্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেরপুরের সীমান্ত উপজেলা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন নদীতে অবৈধ বালু তোলার হিড়িক পড়েছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু তোলায় পরিবর্তন হচ্ছে নদীর গতিপথ। ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, সরকারি বন ও গাছ। এ ছাড়া প্রতি বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে সীমান্ত এলাকায় দেখা দিচ্ছে বন্যা। বালু উত্তোলনে মাটির ক্ষয় যেমন হচ্ছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কমছে উর্বরতা। শুকনো মৌসুমে সীমান্তের অঞ্চলজুড়ে সাধারণ মেশিনে পানি পাচ্ছে না লাখ লাখ মানুষ। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি, কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলেমিশে বালু তোলার কাজ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জানা যায়, ঝিনাইগাতীর সোমেশ্বরি নদীতে ৬ দশমিক ৫৩ একর, মহারশি নদীতে ৭৮ একর, নালিতাবাড়ী ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীতে ১২ একর জমিতে এক বছর বালু তোলার জন্য সারকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়। শ্রীবরদী উপজেলায় কোনো ইজারা নেই। ইজারা দেওয়া জায়গার বাইরে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতীর সীমানায় সোমেশ্বরি ও মহারশি নদীতে বাংলাদেশ-ভারতের শূন্য রেখায় মূল্যবান লালবালু তোলা হচ্ছে। শ্রীবরদীর কর্ণজোড়া, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী ও ভোগাই নদী বরাবর নাকুগাঁও স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারতের শূন্য রেখার একই অবস্থা। বালু খেকোরা মানছেন না দেশ ও আন্তর্জাতিক আইন। নালিতাবাড়ীর বাউরামারিতে ফসলি জমি কেটেও তোলা হচ্ছে বালু। এখানে খরস্রোতা ভোগাই নদীর ওপর স্থাপিত সরকারের ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামের কাছ থেকে বালু তোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাবার ড্যাম ও ড্যামের ওপর নির্মিত সেতু। আসন্ন বোরো মৌসুমে ১০ হাজার একর জমির আবাদ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর। ইজারার বাইরে যেখানেই বালু পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই হানা দিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। রাতারাতি অসংখ্য মেশিন বসিয়ে লুটে নেওয়া হচ্ছে লাল বালু। নদীতে বালু শেষ হলে বোরিং করে তলদেশ থেকে বালু তোলা হয়। দিন-রাত বালু তোলার মেশিনের শব্দ আর ডিজেল পোড়ার দুর্গন্ধে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। ইজারাদাররা বলেছেন, লাখ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। টাকা উঠছে না। অবৈধ বালু তোলা বন্ধ না হলে আগামীতে লোকসান দিয়ে কেউ ইজারা নেবে না। শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, অবৈধ বালু তোলা বন্ধে প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। পরিবেশ ও সরকারি স্বার্থ রক্ষায় অবৈধ বালু উত্তোলনে বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর