মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধরলায় ভাঙন, দেড় বছর বন্ধ মুজিব কেল্লা নির্মাণকাজ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ধরলায় ভাঙন, দেড় বছর বন্ধ মুজিব কেল্লা নির্মাণকাজ

লালমনিরহাটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২ কোটি ৮ লাখ ৫ হাজার ৫৯০ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লাটির নির্মাণকাজ দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ধরলা নদী থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরত্বে প্রকল্পটির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রকল্পটি নদী থেকে কম দূরত্বে হওয়ায় নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে গেল বছরের আগস্ট মাসে মুজিব কেল্লার নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। সরেজমিন দেখা গেছে, বালুর স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মুজিব কেল্লার নির্মাণশৈলী। প্রকল্পটির ৫৫-৬০ শতাংশ সম্পন্ন হওয়ার পর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারণেই এ স্থাপনাটির নির্মাণকাজ থমকে দাঁড়িয়েছে। আদৌ এর অগ্রগতি হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা নদীর দ্বীপচর ফলিমারীতে শুরু হয় মুজিব কেল্লার নির্মাণকাজ। একই বছরের ১৭ আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ করতে পারেনি ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুজিব কেল্লার নির্মাণকাজ যখন শুরু করা হয়েছিল তখন ধরলা নদীর ভাঙনের ব্যবধান ছিল মাত্র ৮০-৯০ মিটার। স্থানীয়রা ওই সময় সংশ্লিষ্টদের কাছে নিরাপদ স্থানে মুজিব কেল্লাটি নির্মাণের দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু সেই দাবি আশার আলো দেখেনি। অথচ দ্বীপচর ফলিমারীতে অনেক খাসজমি থাকার পরও মুজিব কেল্লাটির নির্মাণকাজ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শুরু করা হয়। স্থানীয়দের মতে, অপরিকল্পিতভাবে মুজিব কেল্লা নির্মাণের কাজ শুরু করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ধরলার ভাঙনের কবলে পড়ে মুজিব কেল্লা নির্মাণ এখন বন্ধ রয়েছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও কোনো উপকারে আসছে না দ্বীপচরবাসীর। ধরলা নদীর ভাঙন এখন ১২-১৩ মিটার দূরত্বে এবং যে কোনো সময় নির্মাণাধীন মুজিব কেল্লাটি ভাঙনের কবলে পড়ে ধরলার বুকে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আমিন উদ্দিন বলেন, সরকার আমাদের কল্যাণের জন্য মুজিব কেল্লা নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু এখন সরকারের কোটি কোটি টাকা আমাদের কোনো উপকারে আসছে না। আমাদের এলাকায় প্রায় ৩০০টি পরিবার বসবাস করছি। বন্যার সময় আমাদের খুব কষ্ট করতে হয়। সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মশিউর রহমান বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মুজিব  কেল্লাটি নির্মাণের জন্য যখন জায়গা নির্বাচন করা হয়েছিল তখন ধরলা নদীর ভাঙন প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ছিল। নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে মুজিব  কেল্লাটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল। ধরলার ভাঙন কাছাকাছি আসায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মুজিব কেল্লাটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ধরলা নদীর ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নদীর ভাঙনরোধ করা না পর্যন্ত মুজিব  কেল্লাটির নির্মাণকাজ সম্ভব নয়। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, দ্বীপচর ফলিমারীতে ধরলার ভাঙনরোধে ১ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে আট মাস আগে। এ ব্যাপারে এখনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া মেলেনি। আদৌ এ বরাদ্দ দেবে কি না এ বিষয়ে সন্দিহান রয়েছে। দ্বীপচর ফলিমারী এলাকায় ধরলার ভাঙনরোধ করতে হলে প্রায় ১ কিলোমিটারজুড়ে কাজ করতে হবে। আর এতে খরচের পরিমাণ  বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।

সর্বশেষ খবর