বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আখ সংকটে সময়ের আগেই বন্ধ জিলবাংলা সুগার মিল

শুভ্র মেহেদী, জামালপুর

আখ সংকটে সময়ের আগেই বন্ধ জিলবাংলা সুগার মিল

আখ সংকটে চলতি মৌসুমে নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুরের জিলবাংলা সুগার মিল। চিনিকলের চেয়ে গুড় তৈরির কারখানায় আখ বিক্রিতে লাভ বেশি হওয়ায় চুক্তিবদ্ধ চাষিরা আখ সরবরাহ না করায় এই সংকট দেখা দেয়। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চিনিকলটি। এদিকে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে চিনির দাম, সেই সঙ্গে ক্রয়ের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের। চলতি মৌসুমে ৬৮ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে গত ২ ডিসেম্বর আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করে জিলবাংলা সুগার মিল। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ৬০ দিন আখমাড়াইয়ের কথা ছিল, কিন্তু আখ সংকটে ৪১ দিন আখমাড়াইয়ের পর ১২ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায় মাড়াই কার্যক্রম। আর এই ৪১ দিনে ৩৫ হাজার ১৭১ মেট্রিক টন আখমাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন। এদিকে আখ সংকটে জিলবাংলা সুগার মিলে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও মিলের কমান্ড এরিয়ায় মধ্যেই এখনো শত শত একর জমিতে আখ বিদ্যমান, আর এসব আখ দিয়েই অবৈধভাবে মিলের কমান্ড এরিয়ার মধ্যে চলছে অর্ধশতাধিক গুড় তৈরির কারখানা। চিনিকলের চেয়ে গুড় তৈরির কারখানায় আখ বিক্রিতে লাভ বেশি হওয়ায় চুক্তিবদ্ধ চাষিরা মিলের পরিবর্তে আখ সরবরাহ করছে গুড়ের কারখানায়। তাই আখ সংকটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। অথচ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্রতিদিন শত শত মণ গুড় তৈরি করছে ব্যবসায়ীরা। আখ চাষিরা বলছেন, ৯ থেকে ১০ মণ আখ থেকে ১ মণ গুড় পাওয়া যায়। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। গুড় উৎপাদনকারীরা কৃষকের কাছ থেকে ৪০ মণ আখ ১১ থেকে ১২ হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছেন। অথচ একই সমপরিমাণ আখ মিলে সরবরাহ করলে তারা পান ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৪০ মণ আখে চাষিরা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি পাচ্ছেন। আখ চাষি তারেক মাহমুদ জানান, আমরা চিনিকলেই আখ সরবরাহ করতে চাই।

, কিন্তু আখ হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী ফসল, ১ বছরের বেশি সময় লেগে যায়, অথচ একই সময়ে অন্য ফসল তিন থেকে চারবার করা যায়। সেখানে চিনিকলে আখ সরবরাহ করলে যে দাম দেওয়া হয়, তাতে আমাদের উৎপাদন খরচই উঠে না, কর্তৃপক্ষ আখের দাম বৃদ্ধি না করলে ভবিষ্যতে চিনিকলে আরও আখ সংকট দেখা দিবে। অপরদিকে সারা দেশের মতো জামালপুরের বাজারগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে চিনি সংকট। বিশেষ করে এক মাসের বেশি সময় ধরে প্যাকেটজাত চিনি বাজারে নেই, আর খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চিনি আমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে না এক মাস হলো, আর ঢাকাতেই খোলা চিনি পাইকারি কিনতে হচ্ছে ১০৬ থেকে ১০৭ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে চিনির দামও বেড়ে যাওয়ায় ক্রয়সাধ্য ক্রমশ সংকোচিত হয়ে আসছে ক্রেতাদের। জিলবাংলা সুগার মিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বি হাসান জানান, ২০২২-২৩ মৌসুমে জিলবাংলা সুগার মিল ৩৫ হাজার ১৭১ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করার পর আখ সংকটে বর্তমানে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আগামী মৌসুমে ৬০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্য নিয়ে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমানে জিলবাংলা সুগার মিলে ১৭৯১.৩৩ মেট্রিক টন চিনি মজুদ রয়েছে, আর মিল থেকে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।

সর্বশেষ খবর