শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শ্রীমঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছে চা জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

শ্রীমঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছে চা জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা

চা বাগান অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজার। এ জেলার সাত উপজেলায় রয়েছে ৯২টি চা বাগান। এসব বাগানে বাসবাস করছে ৮০টি জাতিগোষ্ঠী। বাগানে বসবাস করায় এরা চা জনগোষ্ঠী হিসেবেই অধিক পরিচিত। প্রায় ২০০ বছর ধরে এ ৮০ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাগানে মিলেমিশে বাস করলে তাদের রয়েছে আলাদা ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা। এ জাতিগোষ্ঠী বিভিন্ন উৎসবে নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরতে পারলেও ভাষাচর্চার কোনো সুযোগ নেই। ফলে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজেদের ভাষা ও জাতিসত্তা।

গবেষকরা মনে করেন, চা জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ নিজস্ব ভাষার বর্ণমালায় লেখা বই না থাকা। বাগানের বাইরে তাদের নিজেদের ভাষাচর্চার সুযোগও সীমিত। বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি চা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার বই। জানা যায়, ব্রিটিশরা ১৮৫৫ সালে ভারতের বিহার, মাদ্রাজ, উরিষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশসহ অন্য অঞ্চল থেকে চা বাগানে কাজ করার জন্য বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ নিয়ে আসে। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের ভোটাধিকার দেন। সেই থেকে বংশপরম্পরায় তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চা বাগানে বাস করছেন। তাদের সন্তানরা শিক্ষাজীবন শুরু করছে বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। সরকারি তালিকায় চা বাগানে রয়েছে ২৩টি জাতিগোষ্ঠী। এর মধ্যে ২১ জাতিগোষ্ঠী মৌলভীবাজারের বাগানগুলোতে বসবাস করছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেড বাংলাদেশ ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে সিলেট ও চট্টগ্রামে ১৫৬টি চা বাগানে জরিপ করে ৮০টি জাতিসত্তা ও গোষ্ঠীর সন্ধান পায়। লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, চা বাগানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক জাতিগোষ্ঠী এখন সংখ্যায় কমে গেছে। তাদের ভাষার চর্চা হচ্ছে না। চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতাল, মুন্ডা, গারো, তেলেগু, ওরাওঁ ও কন্দ ভাষা বিপন্নের পথে। এগুলো রক্ষা করতে হলে তাদের ভাষার বর্ণমালা সংগ্রহ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে ভাষাচর্চা কেন্দ্র করতে হবে। বালাগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য বলেন, চা জনগোষ্ঠীর ভাষা বাঁচিয়ে রাখা, সংরক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতার জন্য মাস্টারপ্ল্যান দরকার। এ জন্য বাংলা একাডেমি বা জেলা প্রশাসন অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। কমলগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান চা শ্রমিক সন্তান রামভজন কৈরী বলেন, চা শ্রমিকদের ভাষা দৈনন্দিন জীবনে কোনো কাজে লাগছে না।

তারা বাগানের বাইরে তাদের ভাষায় কথা বলে সম্মান পাচ্ছেন না। বরং অনেকের কাছেই এটা হাস্যকর। চা বাগানের এ বৈচিত্র্যময় ভাষা-সংস্কৃতি যদি জনগোষ্ঠীর কাছে সম্মানের জায়গায় না থাকে তাহলে ধরে রাখা মুশকিল। 

সর্বশেষ খবর