দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে আগস্টে। আর ভারী বৃষ্টি ও ফেনী থেকে নেমে আসা বানের পানিতে প্লাবিত হয় নোয়াখালীর আট উপজেলা। এর দুই মাস পরেও মানুষের দুর্ভোগ শেষ হয়নি। বন্যাপরবর্তীতে দীর্ঘ হয়েছে জেলার জলাবদ্ধতা। এর জন্য অবৈধভাবে খাল দখল, খালের ওপর বহুতল ভবন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কালভার্ট, বাঁধ নির্মাণকে দায়ী করছে সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ির উঠোনে পানি এখনো রয়েছে। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও এর চেয়ে বেশি পানি রয়েছে। একই চিত্র সদরের নেওয়াজপুরের দৌলতপুর ও বেগমগঞ্জের ছয়ানীতে। স্থানীয়রা জানান, বন্যার পর দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পানিবন্দি চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ ওয়ার্ডবাসী। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো বেশির ভাগ বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি রয়েছে।
মজিবুল হক নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বসতঘর থেকে পানি নেমে গেলেও রান্নাঘর ও উঠানে পানি আছে। ঘরের ভিতরে কাদামাটি। নাতিনাতনিদের নিয়ে এ পরিস্থিতিতে ঘরে ওঠা সম্ভব না। কারণ উঠানে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তাতে পড়লে তারা ডুবে যাবে। তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস আগে তিনি বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যান। কয়েক দিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে তাদের চলে আসতে হয়। এর পর থেকে চৌমুহনী বাজারের ছোট একটি বাসা তারা ভাড়া নিয়েছেন। এখনো পরিবারের সবাই ওই বাসায়। কবে নাগাদ পানি নামবে আর কবে বাড়ি যেতে পারবেন তা অনিশ্চিত। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু চৌমুহনী পৌরসভা নয়, একই চিত্র জেলার সদর উপজেলার নেয়াজপুর, চরমটুয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক ইউনিয়নে। জলাবদ্ধতা দীর্ঘ হওয়ায় বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ। জলমগ্ন এলাকার লোকজনের অভিযোগ, কয়েক বছরে প্রভাবশালী মহল জেলার অধিকাংশ বড় খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। দোকানঘর করে ভাড়া দিয়েছে অনেক স্থানে। সংযোগ খালগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বন্যার পর বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক স্থান থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় খালের ওপর থাকা কিছু স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়াসহ পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রয়েছে।’