সবুজে ঘেরা গাইবান্ধা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে শোভা পাচ্ছে সুরম্য পাঁচ তলা ছাত্রাবাস। প্রায় আট বছর আগে এর নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু হয়নি এখনো। প্রায় ৫ কোটি (৪ কোটি ৭১ লাখ) টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন থাকতেও শিক্ষার্থীরা বাড়তি ভাড়া দিয়ে থাকছেন মেসে। কলেজসূত্রে জানা যায়, এখানে ছাত্রীর চেয়ে ছাত্র সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। ১০০ আসনের ছাত্রীনিবাস থাকলেও কোনো ছাত্রাবাস ছিল না। ছাত্রদের দাবির মুখে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পাঁচ তলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাস নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজের দায়িত্ব পায় পঞ্চগড়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ ট্রেডার্স। ওই বছরের ৪ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে নির্ধারিত সময়েই শেষ হয় মূল কাজ। এরপর থেকে ভবনটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রাবাসের চারদিকে আগাছায় ছেয়ে যাচ্ছে। কলাপসিবল ফটকে ঝুলছে তালা। লোহার ওপর মরিচা পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভিতরে শিক্ষার্থীদের জন্য বেড, টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ধুলাবালিতে ঢেকে গেছে। মাকড়সা জাল বুনেছে রুমের কোনায়, বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখায়। সিঁড়িরও একই অবস্থা। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র। প্রতিটি কক্ষ ময়লা-আবর্জনায় ভরা।রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রবিউল ইসলাম থাকেন শহরের থানাপাড়ায় সপ্তশী মেসে। বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে। তিনি বলেন, কলেজে ছাত্রাবাস থাকলেও চালু নেই। থাকতে হয় মেসে। মেস ভাড়া অনেক বেশি। ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক ছাত্র আলিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে একজনের মেস ভাড়া মাসে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। ছাত্রাবাস চালু হলে তারা মাসে ৩০০ টাকা দিয়ে থাকতে পারতেন।
রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম মিয়ার বাড়ি কলেজ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বলেন, এক সময় মেসে থাকতাম। মেসে থাকলে খরচ বেশি হয়। তাই বাড়ি থেকে বাসে যাতায়াত করছি। যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছাত্রাবাস চালু থাকলে কম টাকায় থাকতে পারতাম। কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বলেন, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি বুঝিয়ে দেয়নি। দীর্ঘদিন পর গত বছরের প্রথম দিকে ভবনটি প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রান্নার জন্য বাবুর্চিসহ লোকবলের অভাব রয়েছে। খুব শিগগিরই ছাত্রাবাস চালু করা হবে।
জেলা শহরের থানাপাড়ায় গাইবান্ধা-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ঘেঁষে ১৯৪৭ সালে ১৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ৮৭৫ এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৮৬০ জন। ১৯৮০ সালে সরকারিকরণ হয় কলেজটি। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শাখা চালু হয়। স্নাতকোত্তর চালু হয় ১৯৯৯ সালে।